
স্টাফ রিপোর্টার:
হাতিরপুল থেকে কাটাবনে যাচ্ছে মেরাজের (১৫) অটোরিকশা। মেরাজ বাতাসের বেগে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার যানকে, আস্তে চালাতে বললে উত্তর দেয় ‘আমার রিকশা তো শক্তি দিয়ে চালানো লাগে না। আর সব সময় এই রাস্তা খালিও পাওয়া যায় না।’ বয়সের কথা জানতে চাইলে জানায় ‘১৫/১৬ হবে।’ ‘কত দিন রিকশা চালাও’ জানতে চাইলে জানায়—‘এক বছর, এর আগে বাসে হেলপারের কাজ করতাম।’ এই এলাকায় তার বয়সী আর কত অটোরিকশা চালক আছে—জানতে চাইলে সে জানায় তার চেয়ে ছোট বয়সের অনেকেই এখানে রিকশা চালায়।
পরিবহনখাতে শিশুশ্রমিক বাড়ার পর বাড়ছে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশুর সংখ্যাও। যদিও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম মুক্ত করার কথা রয়েছে কিন্তু বিজ্ঞজনেরা মনে করেন ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছানোর সঠিক গতিতে নেই বাংলাদেশ। এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ ৬ অক্টোবর ‘শিশুর কথা বলব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ’ প্রতিপাদ্য করে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস।
কিছু পরিসংখ্যান :বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য মতে বর্তমানে (২০২২) দেশে মোট শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ জন। এসব শিশুর মধ্যে বর্তমানে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে।
বিজ্ঞজনেরা যা বলেন :ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, পরিবহন খাতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের নতুন দিক উন্মুক্ত করেছে অটোরিকশা। ঢাকা ও এর আশপাশে কত শিশু ঝুঁকিপূর্ণ এই শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত আছে, আর এর ফলে কত দুর্ঘটনা ঘটছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এই খাতে কোনো নজরদারিও নেই। ফলে দ্রুত বাড়ছে শিশুর সংখ্যা। মাসুদ আলী বলেন, করোনার কারণে বিশ্ব জুড়েই শিশুশ্রম প্রতিরোধ কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ে। ২০২৫ সালের লক্ষ্য পূরণে সঠিক পথে কাজ হচ্ছে না। সঠিক কার্যক্রম এখনো গ্রহণ না করলে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমসহ যে কোনো শ্রম নির্মূল সম্ভব নয়। কলকারখানায় শিশুশ্রম নিযুক্ত কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের। যদিও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রম নিযুক্ত আছে কি না, তা-ও তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে কিন্তু তারা তা করে না।
এ প্রসঙ্গে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম-মহাপরিচালক মোছা. জুলিয়া জেসমিন বলেন, অটোরিকশা তাদের আওতাভুক্ত নয়। তবে বাস-টেম্পো তাদের আওতায় থাকলেও নানা কারণে তারা পরিবহন খাত পরিদর্শন করতে পারেন না। তবে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড লেবার এলিমিনেশনের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে পরিবারগুলোকে শর্ত-সাপেক্ষে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনতে হবে। শিশুকে শ্রমে না দিলেই সে ভাতা পাবে। আমাদের শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে এখনো একটি ধারণা আছে—গরিবের সন্তানের লেখাপড়ার কী দরকার। ছোটবেলা থেকে আয় করলেই ভালো। সে জায়গাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করি, আইন করি কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন করি না।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে শিশুর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে বলেন, আজও দারিদ্র্য, শিশুশ্রম, সহিংসতা ও বৈষম্যের মতো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। আর এ প্রয়াসের মাধ্যমেই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল শিশুদের অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদতবরণকারী শিশুদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার