
স্টাফ রিপোর্টার:
মিশরের কায়রোতে সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনা। চলমান গাজা যুদ্ধের অবসানে এই আলোচনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মধ্যস্থতায় রয়েছে মিশর, কাতার ও তুরস্ক। উপস্থিত রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারসহ মার্কিন ও কাতারি প্রতিনিধিরা।
প্রথমবারের মতো হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার কয়েকটি বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার প্রশাসন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি। যদিও হামাস এখনো তাদের নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে কিছু বলেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনাকে ‘খুবই সফল’ বলে উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হবে। আমি সবাইকে দ্রুত এগিয়ে যেতে বলছি। কারণ সময়ই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেরি হলে আরও প্রাণহানি ঘটবে।’
যদিও আলোচনার আবহ তৈরি হয়েছে, তবুও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা থেকে হুমকি থাকলে তারা আত্মরক্ষামূলক হামলা চালাতে বাধ্য।
গতকাল রোববার গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান ও ট্যাঙ্ক হামলায় বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি অভিযানে আরও ৬৫ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের মুখপাত্র জানান, গাজার ভেতরে আংশিকভাবে হামলা বন্ধ থাকলেও আনুষ্ঠানিক কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার আওতায় প্রাথমিকভাবে ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে গাজা থেকে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি তখনই সম্ভব, যখন বোমা হামলা বন্ধ হবে। কূটনৈতিক ও অন্যান্য সরবরাহ চ্যানেলও সক্রিয় রাখতে হবে।’
ট্রাম্প এক সামাজিকমাধ্যম পোস্টে জানান, ইসরায়েল গাজা থেকে প্রাথমিকভাবে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে। তবে এ প্রস্তাবিত মানচিত্র গাজা উপত্যকার প্রায় ৯ লাখ মানুষকে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
এর আগে এমন মানচিত্র হামাস প্রত্যাখ্যান করেছিল। এবার দলটি তেমন কোনো ‘লাল রেখা’ টানেনি। যা অনেকেই আন্তর্জাতিক চাপের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হামাসের এই নমনীয় অবস্থান প্রায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দুর্বলতার স্বীকৃতি হতে পারে। যদিও গাজার অনেক নাগরিক এই অবস্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন।
একজন সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাতার, মিশর ও তুরস্ক হামাসকে কিছু কঠিন বিষয়ে আপোষ করতে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন আলোচনার ফলাফল নির্ভর করছে এই কূটনৈতিক তৎপরতার সাফল্যের ওপর।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
তবে যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ ইসরায়েল এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে গাজা উপত্যকায় সরাসরি প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন মিশরের দিকে। এই আলোচনার মাধ্যমে গাজা যুদ্ধের অবসান হবে কি না, তা নির্ধারণ হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই। যদিও পথটি এখনো দীর্ঘ ও অনিশ্চিত, তবুও অনেকেই এই আলোচনাকে সম্ভাবনার নতুন জানালা হিসেবে দেখছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার