স্টাফ রিপোর্টার:
ফেসবুকে পোস্ট করে আত্মহত্যা করেছেন আরাফাত রহমান সিয়াম (২৫) নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন সহপাঠীরা। তাৎক্ষণিক তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তারা।
মৃত আরাফাত রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তিনি হলটির বি ব্লকের ১১৫ নাম্বার কক্ষে থাকতেন বলে নিশ্চিত করেন তার সহপাঠীরা। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার চিলাহাটিতে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল থেকে তার রুম ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। মাগরিবের পরও রুম বন্ধ দেখে একজন রুমে ধাক্কা দেন, জানালা দিয়ে উঁকি দিলে তার ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়। পরবর্তীতে দরজা ভেঙে তাকে বের করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে আমাদের এখানে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি সে আগেই মারা গেছে। আমরা যখন মরদেহ পাই, তখন দেখেছি রশি গলার মধ্যে গেঁথে আছে, ফাঁস লেগেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, উনারা বাকি সিদ্ধান্ত নেবেন।
সিয়ামের বন্ধু টগর বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের আগে সিয়ামের কক্ষের সামনে গিয়ে কয়েকবার ডাকাডাকি করছি। এরপর বিকেলে আরও একবার ডাকাডাকি করছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাই নাই। পরে সন্ধ্যায় যখন আবার এসে ডাকাডাকি করি, তখনও কোনো সাড়া না পেয়ে জানালার গ্লাসের উপরের কাগজ সরিয়ে ভেতরে আরাফাতকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। তখন দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসি।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজসহ প্রশাসনে দায়িত্বরত একাধিক শিক্ষক।
এদিকে, আরাফাত রহমান আত্মহত্যা করার আগে সোমবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিটে তার ফেসবুক ওয়ালে (Arafat Siam) একটি স্ট্যাটাস দেন। যার শিরোনাম ছিল, ‘অন দ্য ওয়ে টু ইটারনিটি’।
পোস্টটির সারমর্ম ছিল- ‘আজ আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। এটি একটি স্বর্গীয় মুহূর্ত। বহুদিন ধরে আমি মেডিটেশন করি। আজকেও অন্যান্য দিনের ন্যায় মেডিটেশনে থাকার সময় কেঁপে উঠি। এ অবস্থায় আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই। আমাদের দেহ মূলত সীমাবদ্ধ কিন্তু আত্মা অসীম। আর আত্মাই হচ্ছে মূল শক্তি। মৃত্যুতে এর কিছু হয় না। জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে হলে আগে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। মৃত্যুকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমি এখন জীবনের স্বাদ আস্বাদন করার জন্য প্রস্তুত। আমি জানি পৃথিবীর সকলেই আমার বিরোধিতা করবে।
এর সঙ্গে তিনি গসপেল অব জনের মৃত্যু সম্পর্কিত একটি অংশ জুড়ে দেন।
তিনি আরও লেখেন, আমি প্রায় সম্ভাব্য সব বই পড়েছি। ….কিন্তু একটা বিষয় জানা জরুরি যে, কেউ তোমাকে এটা শেখাতে পারবে না। ….জীবনকে বুঝতে হলে তোমাকে আগে মৃত্যুকে বুঝতে হবে। এটা সবকিছুর পরিসমাপ্তি। …যখনই তুমি মৃত্যুকে বুঝতে পারবে, তখনই তুমি জীবনের উদ্দেশ্য জানতে পারবে। ’
তবে তার আত্মহত্যার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে তার টেবিলে সদগুরু নামে ভারতীয় এক আধ্যাত্মিক গুরুর বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। বইটির নাম ‘ডেথ; আ বুক ফর অল দোজ হু শ্যাল ডাই’। বইয়ের বিষয়বস্তু এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভাষ্য মিলিয়ে সহপাঠীরা বলছেন, এই ব্যক্তির বই ও লেকচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন আরাফাত।
সহপাঠীদের কাছ থেকে আরও জানা যায়, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হলেও ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। এছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ের উপর বিশেষ পরীক্ষা দিতে হতো তাকে। শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন আরাফাত।
কেউ কেউ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত থাকার সুযোগ নেই। কারণ তিনি ইতোমধ্যে একটি অনলাইন চাকরিতে যুক্ত ছিলেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে সেন্টারে রাখা হয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার