Daily Jalalabadi

  সিলেট     বুধবার, ১৯শে নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘কিছু আসে যায় না, আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, তিনিই নেবেন’— রায়ের আগে হাসিনা

admin

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
‘কিছু আসে যায় না, আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, তিনিই নেবেন’— রায়ের আগে হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার:
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগমুহূর্তে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমর্থকদের উদ্দেশে পাঠানো এক অডিও বার্তায় দাবি করেছেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা এবং তাকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিনি বলেছেন, রায় নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ নেই এবং তিনি আবার জনগণের জন্য কাজ করবেন।

বাংলাদেশে তার ক্ষমতাকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আজকের রায় ঘোষণার আগে শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোগ ‘মিথ্যা’ এবং তিনি এমন রায়কে গুরুত্ব দেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগে পাঠানো অডিও বার্তায় আওয়ামী লীগ সভাপতি দাবি করেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার দলকে ‘শেষ করে দিতে’ চাইছে।

৭৮ বছর বয়সী হাসিনা বলেন, ‘এটা এত সহজ না। আওয়ামী লীগ শেকড় থেকে উঠে এসেছে, কোনো ক্ষমতাদখলকারীর পকেট থেকে না।’

তিনি জানান, প্রতিবাদের ডাক দেওয়ার পর দেশজুড়ে সমর্থকেরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন তা তাকে নতুন করে আশ্বস্ত করেছে। তার ভাষায়, ‘তারা আমাদের বিশ্বাস দিয়েছে। জনগণ এই দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদী ও খুনি ইউনুস আর তার দোসরদের দেখিয়ে দেবে বাংলাদেশ কত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে; জনগণই বিচার করবে।’

গত বছর দেশজুড়ে সহিংসতায় রূপ নেওয়া বিক্ষোভের পর হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যান এবং তার আগে পদত্যাগ করেন। এরপর ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। ঢাকায় আদালত হাজিরার নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করেন।

সমর্থকদের উদ্দেশে হাসিনা বলেন, ‘চিন্তা করার কিছু নেই। আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব, আবার মানুষের কল্যাণে কাজ করব, আর বাংলাদেশের মাটিতেই বিচার করব।’

ইউনুসকে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ করে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জোর করে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে অপসারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার অভিযোগ, ‘ইউনুস খুব পরিকল্পনা করে ঠিক এই কাজটাই করেছে।’

তিনি দাবি করেন, গত বছরের ছাত্রবিক্ষোভে সরকার সব দাবি মেনে নিলেও একের পর এক নতুন দাবি তোলা হয়। তার ভাষায়, ‘উদ্দেশ্য ছিল বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।’

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে তিনি নাকচ করে বলেন, ‘আমি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি আর তারা আমাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেয়?’

হাসিনার অভিযোগ, ইউনুস সরকার পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা দিয়েছে। তার কথায়, ‘এভাবে সাধারণ ক্ষমা দিয়ে সে নিজের কাঁধেই দায়টা চাপিয়ে দিয়েছে।’

এই ক্ষমা ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য বিচারপ্রাপ্তির পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘কী ধরনের মানবতা এটা?’—প্রশ্ন তার।

হাসিনা বলেন, ‘রায় দিক, আমার কিছু যায় আসে না। আল্লাহ আমাকে জীবন দিয়েছেন, আল্লাহই নেবেন। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব। আমার বাবা-মা, ভাইবোন সবাইকে হারিয়েছি, তারা আমার ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।’

গণভবনে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গণভবন আমার সম্পত্তি না, এটা সরকারি সম্পত্তি। তারা বলে এটা নাকি বিপ্লব। লুটেরা আর সন্ত্রাসীরা কোনো বিপ্লব করতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আদালতের রায় তাকে থামাতে পারবে না। ‘আমি জনগণের সঙ্গে আছি। আমি আমার কর্মীদের বলছি—চিন্তা কোরো না। সময়ের ব্যাপার মাত্র। তোমরা কষ্ট পাচ্ছ, আমরা ভুলব না, হিসাব হবে। আর আমি বিশ্বাস করি, আমি সেটা ফিরিয়ে দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’

হাসিনা দাবি করেন, তার সরকারের সময়ে দেশের মানুষের জীবন বদলে গিয়েছিল। ‘আজ বেকারত্ব বাড়ছে। আয় নেই। দেশে উৎপাদন নেই। শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক লুট হচ্ছে। বাংলাদেশকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করতে হবে। সবাই ভালো থেকো। জয় বাংলা, জয় বাংলা, বাংলাদেশ।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন

Follow for More!