বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামে প্রচার ও প্রসার করতেই সারা দেশে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিত। আর উদ্বোধনকৃত ওই মডেল মসজিদগুলোতে মাদক, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনসচেতনা সৃষ্টিতে কাজ করা হবে। ইসলামী শিক্ষা উন্নত করতে কাজ করছে সরকার। আমাদের সন্তানরা যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত না হয় সেদিকে পিতা-মাতা স্বজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ছেলে-মেয়ে যাতে সৎভাবে বেড়ে উঠা এবারের আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এদেশে অন্য ধর্মের উপর আঘাত করা ঠিক নয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়ে ছিল বলেই আজ আমরা উন্নয়ন করতে পারছি, নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকতে পারছি। সকলের সার্বিক সহযোগীতা এদেশে আর সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ফিরে আসবে না, মাদক-যৌতুক ও বাল্যবিবাহের প্রবনতা দূর করে সুন্দর, শান্তির জনপদ গড়ে তোলা হবে।
তিনি সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে ৪র্থ পর্যায়ে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটের ‘বিশ্বনাথ মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’র ন্যায় সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথাগুলো বলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মডেল মসজিদের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি ‘সিলেট প্রান্ত ও গোপালগঞ্জ প্রান্ত’র একজন করে ইমাম ও নারী মুসল্লীর কথা শুনেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতির পিতা জামে মসজিদের কাজী ইয়াজ আলী ও শেষে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা নোয়াব আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ইনামুল হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটের বিশ্বনাথ ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যুক্ত হয়ে সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সিলেট প্রােন্তর এ পর্বটি পরিচালনা করেন বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান। বিশ্বনাথের প্রেক্ষাপঠ নিয়ে ইউএনও নুসরাত জাহানের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর নারী মুসল্লি মাহবুবা বেগম ও পুরুষ মুসল্লি মোশাররফ হোসাইনের বক্তব্য শুনেন তিনি। এদিকে গোপালগঞ্জ প্রান্তের পর্বটি পরিচালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-মামুন।
বিশ্বনাথ মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল কাদের শেখ, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সিলেটের ডিআইজি শাহ মিজান শফিউর রহমান শাফি বিপিএম (বার) পিপিএম, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল¬াহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, গণপূর্ত বিভাগের সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জুলিয়া বেগম, বিশ্বনাথ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তৈয়ব আলী, ওয়াহিদ আলী, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির আলী, রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ আলী গণি, দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খায়রুল আমীন আজাদ মেম্বার, বিশ্বনাথ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মানিক মিয়া, রামসুন্দর সরকারি অগ্রগামী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ সভাপতি সেলিম আহমদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিলু, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সহ প্রচার সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন, বিশ্বনাথ পৌরসভার কাউন্সিলর ফজর আলী, জহুর আলী, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিতার মিয়া, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, সদস্য নূর উদ্দিন, সাংবাদিক কামাল মুন্না, নবীন সুহেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পার্থ সারথি দাশ পাপ্পু। এসময় উপজেলা প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইউপি চেয়ারম্যান বৃন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, আলেম-উলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
উল্লেখ্য, এরআগে তিনি প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০ টি মসজিদ, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ৫০টি এবং তৃতীয় দফায় ১৬ মার্চ ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন। সোমবার (১৭ এপ্রিল) উদ্বোধন হওয়া নতুন ৫০টি মসজিদসহ প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে ৯,৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৫৬৪টির মধ্যে এ পর্যন্ত ২শতাধিক মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া হজযাত্রীদের জন্যে রেজিষ্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরী, অটিজম কর্ণার, দাফন পূর্ব আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও ইসলামের দাওয়াতের জন্যে সম্মেলন কেন্দ্র, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদসহ দেশী-বিদেশী অতিথিদের জন্যে থাকার সুবিধা রয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার