জালালাবাদী রিপোর্ট:
গতকাল জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শাহ্নাজ মুন্নীর হাতে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
পেশায় সাংবাদিক। নিজের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করেছেন তিনি। বয়সে তরুণ হলেও সাহিত্যচর্চায় শাহনাজ মুন্নী নতুন মাত্রা যোগ করছেন বলে মন্তব্য করেন ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৯’ প্রদান অনুষ্ঠানের বিজ্ঞ অতিথিবৃন্দ। এ বছর কবি ও কথাসাহিত্যিক শাহনাজ মুন্নী পেলেন এই সম্মাননা।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞজনেরা আরো বলেন, নারীকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সাহিত্যচর্চা করতে হয়। এ অবস্থার মধ্যে থেকে একজন নারীর সাহিত্যে জায়গা করে নেওয়া কঠিন বিষয়। আর তাদের সাহিত্যচর্চার প্রচার-প্রসারও কম। সেই বিবেচনায় অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার নারী সাহিত্যিকদের এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে শাহনাজ মুন্নীর হাতে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামীম কামরুল হক। সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানে শাহ্নাজ মুন্নীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রধান অতিথি। তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কারের সম্মানি চেকের ডামি দেওয়া হয়।
কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, শাহনাজ মুন্নী ধাপে ধাপে নিজেকে কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার লেখা তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। তিনি ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’কে নারী সাহিত্যিকদের জন্য একটা প্ল্যাটফরম উল্লেখ করে বলেন, যারা অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পান, তারা সাহিত্যজগতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার নারী সাহিত্যিকদের অগ্রগতির সঙ্গে অক্ষুণ্ন থাকুক—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই সাহিত্যিক।
পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, মুন্নী তার লেখায় নতুন ও বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছেন মুনশিয়ানার সঙ্গে। প্রযুক্তির কারণে সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন নতুন প্রজন্মের অনেকে বই পড়ে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত বিশ্বেও পড়ার বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও অনন্যা ৩০ বছর ধরে নারী সাহিত্যিকদের একটা জায়গা করার জন্য কাজ করছে। আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন আমাকে অনেকেই বলেছেন, আমি অনেক নারী সাহিত্যিক পাব না সম্মাননা দেওয়ার জন্য। কিন্তু আজ মেয়েরা এত রকমের কাজ করছে যে, আমাকে অনন্যা নির্বাচন করতে বেগ পেতে হয়।’
শিক্ষক হামীম কামরুল হক বলেন, সময়ের সংকটগুলো শাহনাজ মুন্নী তার লেখায় সহজ ও সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেন। যেসব মুসলিম নারী সাহিত্যচর্চা করেছেন, তাদের মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরী, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখযোগ্য। তারা স্বতন্ত্রভাবে সাহিত্যচর্চা করলেও তাদের নারী হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। তাই রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন না বলে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম ফয়জুন্নেসা বলা হয়। কিন্তু সাহিত্যে নারী-পুরুষ ভেদ নেই, সাহিত্যিক সাহিত্যিকই।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে শাহনাজ মুন্নী বলেন, ‘নারীর লেখার ধরন পুরুষের চেয়ে আলাদা। কারণ চিন্তাভাবনাই আলাদা। অনেকে বলেন, মেয়েরা ভালো লেখেন না। অনেক পুরুষও ভালো লেখেন না। লেখা ভালো-খারাপে পুরুষ কিংবা নারী বিবেচনায় আনলে হবে না। আমি ৩০ বছর ধরে সাহিত্যচর্চা করছি। এটিই সাহিত্যিক জীবনে প্রথম আনুষ্ঠানিক পুরস্কার। এই পুরস্কারের জন্য অনন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
শাহনাজ মুন্নীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পর টেলিভিশনে সাংবাদিকতা শুরু করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সামাজিক দায়বোধ থেকে তিনি একের পর এক লিখে চলেন। তার লেখা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য ও প্রবন্ধ মিলে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৪। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো ‘এল ক্রুদ্ধ অন্ধকার’, ‘বাদুর ও ব্র্যান্ডি’, ‘তৃতীয় ঘণ্টা পড়ার আগেই’, ‘পান সুন্দরী’, ‘নির্বাচিত গল্প’, ‘আমি আর আমিন যখন আজিমপুরে থাকতাম’। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩-এ মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হচ্ছে তার উপন্যাস ‘স্নানের শব্দ’। এফ মাইনর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী দলের সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে শাহ্নাজ মুন্নীর ওপর তাপস কুমার দত্ত নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন লেখক নূর কামরুন নাহার।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার