Daily Jalalabadi

  সিলেট     শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহাদের কঠোর হস্তে দমন প্রয়োজন

admin

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
তাহাদের কঠোর হস্তে দমন প্রয়োজন

সম্পাদকীয়:
প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল পূর্বে ছাত্রলীগের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলিয়াছিলেন, ‘আমি শেখ মুজিবকে বেটে খাওয়ালেও বাংলা সোনার বাংলা হবে না, যদি না বাংলাদেশের ছেলে আপনারা সোনার বাংলার সোনার মানুষ হয়ে উঠতে পারেন।’ দুঃখজনকভাবে আজিকার তরুণদের যেই ছাত্রলীগকে আমরা দেখিতে পাইতেছি, তাহাতে বলিতে হয়, ইহাদের সহিত আদৌ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোনো সম্পর্ক আছে কি? এই ছাত্রসংগঠনটির একশ্রেণির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত এমন সকল অভিযোগ শুনিতে পাওয়া যায়, যাহা বেশ বিব্রতকর ও উদ্বেগজনক। হানাহানি, মারপিট, ছোটখাটো অপরাধের সহিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর জড়িত থাকিবার পুরাতন অভিযোগের তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হইয়াছে বিস্মিত করিবার মতো সকল বিষয়। বিশেষ করিয়া চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধের পাশাপাশি তাহাদের একটি অংশ অবতীর্ণ হইয়াছে পৈশাচিক ভূমিকায়। কিছুদিন পূর্বে গরুচুরির সহিত এক ছাত্রলীগ নেত্রীর সম্পৃক্ত থাকিবার খবর আমাদের হতবাক করিয়াছিল। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনাগুলিও যেন ধারাবাহিক রুটিনে পরিণত হইয়াছে। এই সকল বিষয়ের পাশাপাশি ইহাদের বিরুদ্ধে রহিয়াছে মরণনেশা মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ হলের রুমে বসিয়াই তাহাদের মাদক ক্রয়বিক্রয় করিবার কথা শুনা যায়। একশ্রেণির নেতার হাত ধরিয়া সকল প্রকারের মাদকদ্রব্য এখন জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্তও ছড়াইয়া পড়িতেছে। বিষয়টি কতটা উদ্বেগজনক, সচেতন ব্যক্তিমাত্রই উপলব্ধি করিতে পারেন।

ছাত্রলীগের গোড়াপত্তন হইয়াছিল মহত্ উদ্দেশ্যকে সামনে রাখিয়া। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এই সংগঠনের অবদান-ত্যাগকে খাটো করিয়া দেখিবার আদৌ কোনো সুযোগ নাই। এই সংগঠনের সোনালি অধ্যায়ের সাক্ষী আমরা; কিন্তু বিশেষ করিয়া একবিংশ শতাব্দীর ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ‘হতাশ দর্শক’ও আমরা। শিক্ষার্থীসমাজের কল্যাণের জন্য যেই সংগঠনের জন্ম, তাহার দ্বারাই ‘অকল্যাণ’ সংঘটিত হইবার দৃশ্য কীসের আলামত? উল্লেখ করিতে হয়, শুধু ছাত্রলীগ নয়, যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের ছাত্রসংগঠনের একশ্রেণির নেতাকর্মীকে রাজপথ দাপাইয়া বেড়াইতে দেখা যায়। সত্যি বলিতে, রাজনীতি যখন পেশিশক্তিতে পরিণত হইয়া যায়, তখন বুঝিতে হইবে—সেইখানে আর রাজনীতি নাই। বরং সেইখানে ঢুকিয়া গিয়াছে ‘অন্য কিছু’। আমরা ইতিপূর্বে বহুবার বলিয়াছি, সরকার ও প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে ‘অনুপ্রবেশের ছড়াছড়ি’। অন্য দল, মতাদর্শের লোকজন সরকারকে বেকায়দায় ফেলিবার অভিপ্রায়ে বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চস্থান অবধি শিকড় গজাইয়া বসিয়াছে। আমাদের এই সতর্কবার্তার পর আওয়ামী নীতিনির্ধারক মহল কি বুঝিতে পারেন না যে, একই খেলা চলিতেছে দলটির সকল পর্যায়ে! দলের এমনকি শীর্ষ পর্যায়ের একটি শ্রেণির ছত্রছায়ায় বাহিরের লোক ‘ঘরে’ ঢুকিয়াছে-ঢুকিতেছে যেইভাবে, একই কায়দায় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগেও তাহারা সিঁধ কাটিতেছে। এমনও দেখা যায়, দলের অত্যন্ত ক্ষমতাধর নেতার অতি নিকটের ছাত্রলীগের নেতাটি অন্য দলের, ভিন্ন মতাদর্শে দীক্ষিত। অথচ সর্বনাশের ছোরা হাতে লইয়া সুযোগের অপেক্ষায় বসিয়া থাকা সেই ছাত্রনেতাকেই বুঝিয়া কিংবা না বুঝিয়া আশ্রয়প্রশয় দিতেছেন অনেক নেতা। এই ক্ষেত্রে তাহাদের অজগরের সেই গল্পটি মনে করাইয়া দিতে হয়। অত্যন্ত আদরে পালিত অজগর তাহার মনিবকে জড়াইয়া ধরিয়া ছাড়া ঘুমাইতেই চাহিত না। এই অতি ভালোবাসায় অত্যন্ত খুশি মনিব একদিন বিশেষজ্ঞের কাছে জানিতে পারিলেন যে, অজগরটি মূলত তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া একটু একটু করিয়া মাপ নিতেছে; পেটে ধরিবার জায়গা হইলেই গলাধঃকরণ করিবে! এই গল্পকে কি সেই সকল আশ্রয়দাতা সিনিয়র নেতা অগ্রাহ্য করিতে পারিবেন?

আসলে যাহারা সংগঠন কিংবা দলের একনিষ্ঠ নেতা বা কর্মী, তাহারা কোনো অবস্থাতেই দলের নীতি-আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হয়—এমন কোনো কাজ করিবার কথা চিন্তাও করিতে পারেন না; কিন্তু ইহারা কাহারা? তাহাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী? এই ফ্রাংকনস্টাইন হইয়া উঠা সংগঠনের তথাকথিত ‘কর্মীদের’ কঠোর হস্তে দমন আশু প্রয়োজন হইয়া উঠিয়াছে। এবং তাহা দলের প্রয়োজনেই। মনে রাখা দরকার, সময়-সুযোগ বুঝিয়া এই ঝাঁকের কই দল পালটাইতে পটু তো বটেই, স্বার্থের প্রয়োজনে ইহারা কোপ মারিবার বিষয়ে দ্বিতীয় বার ভাবিবে না।

 

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন