স্টাফ রিপোর্টার:
আজ ১লা মে-শ্রমজীবিদের জন্য সরকারি ছুটি । তবে পেটের ক্ষুধা আর জীবন জীবিকার চাহিদায় ছুটি কাটাতে পারছেননা বিয়ানীবাজারের শ্রমিকরা। আজকের মে দিবস রোদ্রজ্জ্বল হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকদের কাজের চাহিদা যেন বেড়েছে। ঈদের ছুটি কাটানোয় ঘরের অনেক সদাই শেষ হয়েছে। তাই ছুটির সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্ধের দিনেও কাজে ছুটেছেন উপজেলার হাজারো শ্রমিক।
সকাল ৮টায় রিকসা নিয়ে বের হয়েছেন দাসগ্রামের আরজু (৪০) মিয়া। তিনি বলেন, ঘর ভাড়া, ভাতের খরচসহ বিয়ানীবাজারে থাকতেও লাগে মেলা টাকা। একদিনও বসে থাকার সময় নাই, তাই আমাগো লাগি মে দিবস না। আমাদের জন্য প্রতিদিন পেট দিবস। কামে বের হইলে ভাত জুটে নইলে না। তাই আমরা মে দিবস কী বুঝি না।
সোমবার বিশ্ব শ্রমিক দিবসের সকালেও পৌরশহরের নয়াগ্রাম রোডের শ্রম হাটে অন্তত: ৪০-৫০জন ভাসমান শ্রমিক জীবিকার তাগিদে হাজির হন। এই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এখানে আসা অধিকাংশ শ্রমিক নির্মাণ কাজের রাজ মিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করে থাকেন। এছাড়া মাটির কাজও করেন তারা। তবে প্রতিদিন এখানে সবাই কাজ পান না। তাদের কাছে প্রতিদিন কাজ পাওয়াই একটি বড় যুদ্ধ।
নয়াগ্রাম রোডে বসে থাকা হবিগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিক জামাল মিয়া বলেন, মে দিবস বড় লোকগো দিবস। উনারা আজ ছুটিতে থাকব, বৌ-বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে বেরাইব। মে দিবস তো আমাগো লাইগা না। কারণ আমাদের পেটে খিদা। যে দিন কাজ পাই সে দিন ভালো যায়, আর যেদিন পায় না সে দিন খারাপ। এই হলো আমাদের জীবন।
এখানে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এদের অধিকাংশের বাড়ি ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও দিনাজপুরে। এরা এভাবে প্রতিদিন জোগালি কিংবা মাটির কাজ করতে এক জায়গায় জড়ো হয়ে বসেন। কিছু কাজ করে টাকা জমলে সেই টাকা এলাকায় তাদের পরিবারের কাছে পাঠান। সে টাকা দিয়ে তাদের পরিবার চলে।
মে দিবসে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জীবন-জীবিকার টানে কেউ মাটি কাটছেন, কেও সেই মাটি ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন, কেও ওই মাটি দলা পাকিয়ে এগিয়ে দিচ্ছেন কারিগরের হাতে আর কারিগর তা ফর্মায় ফেলে তৈরি করছেন বিত্তবানদের উচ্চ অট্টালিকা তৈরির ইট। আবার কেউ ইটভাটার আগুনের সঙ্গে সংগ্রাম করে সেসব ইট গরম চুল্লি থেকে নামিয়ে সাজিয়ে রাখছেন। তাদের সবার লক্ষ্য একটাই—সারা দিন রোদে পুড়ে হাড়ভাঙা খাটুনির পর এক মুঠো চাল-ডাল নিয়ে বাড়ি ফেরা। এদের কাছে মে দিবস আসে-যায়, কিন্তু তাদের কাজের বিরাম নেই—মুক্তি মিলছে না মজুরি বৈষম্য থেকেও।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার