স্টাফ রিপোর্টার:
আগাম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে সিলেটের রাজনীতিতে। নড়েচড়ে বসছেন সিলেটের রাজনীতিকরা। কেউ কেউ প্রচারণায়ও। সেটি কেবল জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই নয়। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও। এক বছরের কম সময় বাকি জাতীয় নির্বাচনের। তবে- সিটি নির্বাচনের বাকি ৪/৫ মাস। জুন কিংবা জুলাইয়ে হতে পারে এ নির্বাচন। এ কারণে প্রস্তুতি শুরু প্রার্থীদের। তবে- নির্বাচনী ডামাডোলে এগিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
নীরব বিরোধীজোটের নেতারা। তারা এখনই নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। সিলেটের নির্বাচনী ডাকাডোলে সর্বশেষ এসে শরীক হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও। আগামী সিটি ও জাতীয় নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। হাত তুলে ওয়াদাও করিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নগরের আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি এ ভোট চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে আপনারা আবারো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে এদেশের মানুষের সেবার সুযোগ দিবেন।
আর আমরাও আমাদের এই পবিত্র নগরীকে আরও সুন্দর করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।’ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে হঠাৎ করেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভেতরে তোড়জোড়। সিটি নির্বাচন নিয়ে নীরব ছিলেন সবাই। এই নীরবতা ভাঙলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সঙ্গে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও। আনোয়ার ছিলেন সিলেট-২ আসনের নৌকার টিকিট প্রত্যাশী। দীর্ঘদিন মাঠে। কিন্তু জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সিলেটে এসে ঘোষণা দিলেন নগর নির্বাচনের। এরপর থেকে গতি বাড়িয়েছেন আনোয়ার। বসে নেই অন্য প্রার্থীরাও। আনোয়ারের ঘোষণায় তারা বিব্রত হলেও দলীয় ফোরামে নৌকার টিকিটের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে গোটা নগর। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা কে কার চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবেন- এ নিয়েও চলছে প্রতিযোগিতা। সরকারি দল আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকার টিকিটের লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। বৃহস্পতিবার তিনি এ ঘোষণা দেন।
তবে- আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, এটিএম হাসান জেবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্স সদরুজ্জামান। প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে তোড়জোড় বেশি। সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র তরফ থেকে এখনো কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি দলীয়। এই মুহূর্তে তিনিও নীরব। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ভাষ্য হচ্ছে- দলের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকবেন তিনি। এখনো সময় আসেনি। এ কারণে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। বিএনপিতে আরিফ ছাড়াও আরও কয়েকজন ভেতরে ভেতরে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন। সেক্ষেত্রে দল থেকে পজেটিভ সিদ্ধান্ত এলে সেটি আরিফের পক্ষেই যাবে- এমনটি মনে করছেন খোদ দলের নেতারাই। পরপর দু’বার সিলেটের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফ। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। ফলে আগামীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কী সিদ্ধান্ত আসে সেটি জানতে অপেক্ষা করতে হবে।
এখন বিএনপি’র সব নেতারা আন্দোলনমুখী। এদিকে, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সিলেটের সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। ভেতরে ভেতরেই অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি ছাড়া অন্যান্য দলের নেতারাও একইভাবে আলোচনায়ও আছেন। তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরাও এলাকামুখী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা সাপ্তাহিক ছুটির দুইদিন নিজ নিজ এলাকা সফর করছেন। সিলেট-১ আসনের এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও এমপিরা এলাকামুখী হচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দিকে তাদের নজর বেড়েছে।
অনেকেই চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাজ শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন। নিজেদের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরতে তারা দৃশ্যমান উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছেন। রাজনৈতিকভাবে সিলেটের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি গোছালো। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কোন্দলও কমে এসেছে। তবে- আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি অনেক বেশি সুসংহত। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র তরফ থেকে রাজপথে শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। বিএনপি’র এই কর্মসূচির পাল্টাও দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। জাতীয়পার্টিতেও চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির ব্যানারে সক্রিয় হওয়া নেতারা এবার দলীয় মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন। সিলেট জেলার কয়েকটি উপজেলায় ইতিমধ্যে ১৫-২০টি দলীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। এবার সিলেট জেলার ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসন মহাজোটের কাছে চাইবেন নেতারা। নীরবে কাজ করছে জাতায়াতে ইসলামী। সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জামায়াত নেতারা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার