স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের বারইগ্রামের ফারুক উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বাড়ির অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে তাদের মালিকানাধীন ভূমি উদ্ধার, কবরস্থানের উপর দিয়ে রাস্তার তৈরীর মিথ্যা প্রপাগান্ডার প্রতিবাদ ও ফারুক উদ্দিনের প্রবাসী পুত্রের উপর প্রাণনাশ মূলক সন্তাসী হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার পূর্বক কঠোর শাস্তি প্রদান এবং তাদের নিরাপত্তার দাবী জানানো হয় লিখিত বক্তব্যে। ২৫ মে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন ফয়ছল আহমদ, এই সময় তার পাশে ছিলেন পিতা ফারুক উদ্দিন ও মাতা ছুরেতুন নেছা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফয়ছল আহমদ বলেন, আমি ও আমার অপর দুই ভাই প্রবাসে বসবাস করি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা ও আমাদের স্ত্রী সন্তানরা বসবাস করেন। বর্তমান বসত বাড়িতে আমাদের মালিকানাধীন (মৌজা বারইগ্রাম, জে.এল নং ১৪০, এস.এ খতিয়ান নং ২০১, এস.এ দাগ নং ৫৯৭ ও ৫৯৮, ডিপি খতিয়ান নং ১৮০, হাল দাগ নং ৫৫৭ ও ৫৫৮, পরিমাণ ১৫ শতক ও হাল খতিয়ান নং ৪০, হাল দাগ নং ৫৫৮, পরিমাণ ২ শতক) মোট ১৭ শতক ভূমির মধ্যে প্রায় ২ শতক ভূমি পার্শ্ববর্তী বাড়ির আব্দুল আজিম বলাই গং জোরপূর্বক জবরদখল করে ভোগ করছেন। এছাড়া আমার পিতার সাবকবালা দলিল মূলে ক্রয়কৃত (মৌজা বারইগ্রাম, জে.এল নং ১৪০, এস.এ খতিয়ান নং ৩০, হাল খতিয়ান নং ৩৪০, এস.এ দাগ নং ৫৮৬, হাল দাগ নং ৫৪৫) ২.৫০ শতক ভূমি সমস উদ্দিন ও সেলিম উদ্দিন গং জালিয়াতি মূলক ভাবে রেকর্ড করে জোরপূর্বক জবর দখল করে ভোগ করছেন। তাছাড়া আমার পিতার মাতৃ সূত্রে মালিকানাধীন (মৌজা বারইগ্রাম, জে.এল নং ১৪০, এস.এ খতিয়ান নং ২৩৩, এস.এ দাগ নং ৬০০) ১৭ শতক ভূমি আহমদ হোসেন স্বপন গং জালিয়াতি মূলক ভাবে রেকর্ড করে জোরপূর্বক জবর দখল করে ভোগ করছেন। আমাদের মালিকানাধীন উলেখিত ঐসকল ভূমি গুলো উদ্ধারের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রামের মুরব্বিদের উদ্যোগে একাধিকবার সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও বিবাদীদের অসহযোগীতায় কোন সমাধান হয়নি। স¤প্রতি আমি দেশে আসার পর বেদখলে থাকা আমাদের বৈধ মালিকানাধীন এসকল ভূমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেই। প্রথমে গ্রাম্য মুরব্বিদের শরণাপন্ন হয়ে বিফল হওয়ার পর আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা দায়ের করি। মামলা দায়েরের পর মাননীয় আদালত অভিযুক্ত এই সকল ভূমির উপর ১৪৪ ধারা জারি করে মামলার আইনানুগ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর নোটিশ দেওয়া হয় বিবাদীদের। এতে করে আমার আশপাশ বাড়ির এই সকল দখলদাররা আমাদের উপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রথমে দুরবিসন্ধি মূলক ভাবে সমাজে আমাদের পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্র করে। আমাদের বসতঘর লাগোয়া পশ্চিম পাশে অবস্থিত সরকারি মালিকানাধীন কবরস্থানের ভূমির আমাদের বসতঘর সংলগ্ন অংশ ১৫/১৭ জন শ্রমিক নিয়োগ করে নিজেরা দাড়িয়ে থেকে মাটি কেটে কবরস্থানের উপর দিয়ে রাস্তার মতো তৈরী করে। এসময় বাড়িতে থাকা আমার মা বিষয়টি স্থানীয় মুরব্বি ও বারইগ্রাম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজামুল হক নাজিম সহ কয়েকজন মুরব্বিকে বিষয়টি অবগত করেন। তৎসময় নিজামুল হক নাজিম ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে বুঝিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করেন। কিন্তু এই বিষয়টিকে তারা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সমাজে ছড়িয়ে দেয় যে, আমরা শ্রমিক লাগিয়ে জোরপূর্বক মাটি কেটে কবরস্থানের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরী করতে চাচ্ছি। তারা মানুষের সহতানুভূতি আদায়ের জন্য আরো প্রকাশ করে যে, আমরা মুক্তিযোদ্ধার কবরের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরী করছি! তারা ষড়যন্ত্রমূলক পায়তারা করে বিয়ানীবাজার উপজেলার একজন সম্মানিত জনপ্রতিনিধিকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করিয়ে ফেইসবুক লাইভের মাধ্যমে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ায় এ বিষয়ে। অথচ আমরা নয় তারা যে নিজেরা শ্রমিক লাগিয়ে এই মাটি কেটে রাস্তার মতো তৈরী করেছে তার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, তাছাড়া বারইগ্রাম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজামুল হক নাজিম সাহেব সাক্ষী রয়েছেন।
এদিকে তারা কেবল ষড়যন্ত্র করে ক্ষান্ত না হয়ে আমি ও আমার পরিবারের লোকদেরকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভূমির মামলা তুলে নিতে। তাদের হুমকিতে আমরা পিছপা না হওয়ায় গত ৩ মে বুধবার রাত প্রায় ৯.৩০ ঘটিকার সময় আমি বাড়ির পার্শ্ববর্তী বারইগ্রাম বাজার সংলগ্ন লালমাটি নামক স্থানে হাবিবুর রহমানের দোকানে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় আমাদের গ্রামের রাব্বি, পিতাঃ জয়নাল আবেদীন এপলু, সামি, পিতাঃ আহমদ হোসেন স্বপন (মেম্বার) এবং অমি ও অনি, উভয় পিতাঃ নুরুল ইসলাম গং দোকানের মালিক ও উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে আমাকে গালাগালি করে দোকান থেকে বের হয়ে আসতে বলে। এসময় তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ছিল। তারা আমাকে মারার জন্য প্রকাশ্যে এই সময় হুমকি দিয়ে দোকানে বাহিরে অবস্থান নেয়। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে অসহায় নিরুপায় হয়ে আমি প্রাণের ভয়ে এক পর্যায় ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগীতা চাই। পরে পুলিশ আসার পূর্বেই দোকনদার ও স্থানীয় কিছু লোক আমাকে বাড়ি পৌছে দেন। এই ঘটনার ১৭ দিন পর গত ২১ মে রবিবার রাত প্রায় ৯টার সময় আমি মোটর বাইক যোগে বাড়ি থেকে বের হয়ে মূল রাস্তায় (নুরুল ইসলামের বাড়ির সম্মুখে) আসতেই পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা রাব্বি, পিতাঃ জয়নাল আবেদীন এপলু, সামি, পিতাঃ আহমদ হোসেন স্বপন (মেম্বার) ও অমি ও অনি, উভয় পিতাঃ নুরুল ইসলাম গং আমাকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে আমার উপর আকষ্মিক হামলা চালায়। তারা লোহার রড, হাতুরি ও কাঠের রোল দিয়ে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে হামলা করে, তাদের একজন পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। চলন্ত মোটর বাইক এগিয়ে যাওয়ায় লোহার রডের আঘাত আমার পিঠে ও ডান বাহুতে পড়ে। অন্য দুজন হাতুরি ও কাঠের রোল দিয়ে আঘাত করলে আমার পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়ে। প্রাণ রক্ষার্থে কোনমতে এগিয়ে গিয়ে লালমাটিস্থ দোকানের সামনে গিয়ে চিৎকার দিলে লোকজন এগিয়ে আসায় পিছন থেকে দাওয়া করে আসা ঐ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ায় আমি প্রাণে রক্ষা পাই। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আমাকে প্রথমে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা গেছে আমার ডান বাহু জয়েন্ট থেকে পৃথক হয়ে গেছে। ৩ দিন চিকিৎসার পর পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শে হাসপাতাল থেকে ছাড় পাই।
তিনি আরো বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও গ্রামে অত্যান্ত নিরিহ প্রকৃতির লোক হিসেবে বসবাস করছি। পক্ষান্তরে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী ও উগ্র প্রকৃতির লোক। এ অবস্থায় গায়ের জোরে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে আমাদের মালিকানাধীন উপরে উলেখিত সেকল মূল্যবান ভূমি দীর্ঘদিন থেকে আত্মসাৎ করে ভোগ দখল করছে, সেই ভূমি গুলো নিজেদের দখলে রাখার পায়তারায় তারা এই সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এ অবস্থায় আমরা সমাজের বিবেক প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের দর্পন সংবাদপত্রের সহযোগীতায় সংশ্লিষ্ট প্রসাশন ও সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের বৈধ মালিকানাধীন ভূমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করে দিতে, আমার উপর সংঘটিত প্রাণনাশ মূলক সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং গোরুস্থানের উপর দিয়ে রাস্তার তৈরীর আমাদের উপর প্রকাশিত মিথ্যা প্রপাগান্ডা নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে সত্য উদঘাটন করার সবিনয় অনুরোদ জানাচ্ছি।
আমরা পরিষ্কার ভাবে বলছি যে, পবিত্র গোরস্থানের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের আমাদের কোন ইচ্ছে নেই। আমরা এধরনের কোন কর্মকান্ডের সঙ্গে এখনো সম্পৃক্ত নয়, ভবিষ্যতেও থাকব না। সর্বপরি আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার স্বরুপ আমাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দানে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রনিধিদের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি। পাশাপাশি সকল স্থরের সম্মানিত নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সমাজের নানা শ্রেণী পেশার ব্যক্তি বর্গের কাছে সবিনয় অনুরুধ আপনারা এক পক্ষের ষড়যন্ত্র মূলক বক্তব্য শুনে বিভ্রান্ত না হয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য ও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার