উপ-সম্পাদকীয় :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে-সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা বারবার বলা হলেও দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে সেটা কীভাবে সম্ভব, এমন প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না।
তাদের মতে, নির্বাচনের যেহেতু এখনো অনেকটা সময় বাকি, তাই সমঝোতার সময় রয়েছে। আমরা মনে করি, উভয় পক্ষেরই উচিত এ সময়টাকে কাজে লাগানো। নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষত প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতির অবসান না ঘটলে তা দেশ ও জনগণের জন্য অশুভ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
করোনা মহামারির অভিঘাত মোকাবিলার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণে এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার পথ পরিহার করে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অস্থিতিশীল করে তুলছে, যা উদ্বেগজনক।
আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণকেই শ্রেয় বলে মনে করি আমরা। পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো যদি আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যায় এবং সেখানে সমাধানের পথ খোঁজা হয়, তাহলে দেশের রাজনীতিতে সংঘাত, সংঘর্ষ ও নৈরাজ্য হ্রাস পাবে।
অনেকে মনে করেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সম্পর্ক শত্রুতায় পর্যবসিত হওয়ায় গণতন্ত্র ও দেশের উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে। গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে, তা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। দেশে সমঝোতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে এ অবস্থার অবসান ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার রাজনীতি পরিহার করে একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি যে আরও বেগবান হবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সংঘাত, সহিংসতা, এমনকি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতার পালাবদল বিচিত্র কিছু নয়। এমনটি ঘটলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, যা কারও কাম্য নয়।
রাজনৈতিকভাবে অসহিষ্ণু এ দেশটিতে নির্বাচন, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কেবল সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তাছাড়া সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাত ও রপ্তানিমুখী শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় এসব শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিকের ভাগ্যও হয়ে পড়বে অনিশ্চিত।
সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম না হলে বিনিয়োগ ও উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে না। এসব বিষয় মাথায় রেখে সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল ও অর্থবহ করে তুলবে, এটাই প্রত্যাশা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার