স্টাফ রিপোর্টার:
ভারতের ওডিশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর পাঁচ দিন কেটে গেছে। এখন পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় ২৭৫ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০টি মরদেহের কোনো পরিচয় মিলছে না।
গত শুক্রবার রাতে ভারতের পূর্বাঞ্চলের ওডিশা রাজ্যের বালাসোর এলাকায় তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে দুটি ছিল যাত্রীবাহী ও একটি মালবাহী। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সহস্রাধিক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো অনেকে তাঁর প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে ফিরছেন। এই দুর্ঘটনাকে ২০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ভয়াবহ বলা হচ্ছে।
বিভিন্ন খবরে বলা হয়, যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ছিল যাত্রীতে ঠাসা। এগুলোতে তিন হাজারের বেশি যাত্রী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধানে তাঁদের স্বজনেরা ওডিশা ও অন্যান্য রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন, যদি প্রিয় মানুষটির কোনো খবর মেলে। অন্যদিকে অনেকগুলো মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বালাসোর জেলা হাসপাতালের দেয়ালে এ দুর্ঘটনায় নিহত অনেকের ছবি ঝুলছে। এর মধ্যে দুই কিশোরের ছবিও রয়েছে। যদিও তাদের মুখমণ্ডল থেঁতলে গেছে। এসব ছবির মানুষদের স্বজনেরা যাতে শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্যই এ ব্যবস্থা।
স্বজনের খোঁজে হাসপাতালে আসা মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন বলছেন, ছবির ২০ ও ১৬৯ নম্বরে থাকা ২ কিশোর তাঁর ১৬ বছরের নাতি তাফসির ও ১১ বছরের তাউসিফ। তারা তাদের বাবার সঙ্গে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিল। মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন ছেলের খোঁজ এখনো পাননি, তবে নাতিদের লাশ রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, সেখানেই ৪টি হাসপাতালে পরিচয় শনাক্ত হয়নি, এমন প্রায় ১০০টি মরদেহ রাখা হয়েছে। কিন্তু একজন কর্মকর্তা নাজিমুদ্দিনকে থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, তাফসিরের লাশ এরই মধ্যে আরেকটি পরিবার দাবি করেছে, যদিও এখনো তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর হয়নি।
নাজিমুদ্দিন বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? তার মানে কি আমি আমার নাতিদের চিনি না।’
এখন তাঁকে ভুবনেশ্বরের পৌর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ যাতে সঠিক পরিবারের কাছেই যায়, সে জন্য এ ধরনের দাবি ও শনাক্তকরণের কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে দেখছেন।
ভুবনেশ্বর পৌর করপোরেশন কমিশনার বিজয় অমৃতা কুলাঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘আপনি যদি ছবির ডেটাবেজ ধরে যান, তাহলে দেখবেন, সেখানে শনাক্তের অপেক্ষায় অনেক মরদেহ পড়ে আছে। এগুলোতে এখন পচনও ধরে গেছে।’
বিজয় আরও বলেন, ‘কোনো মরদেহ একাধিক পরিবার নিজেদের বলে দাবি করলে সেখানে পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপরও যেসব মরহেদ শনাক্ত হবে না, সেগুলো হাসপাতালের মর্গে আগামী ১০ দিন রাখা হবে।’
গত শনিবারই দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজ শেষ করা হয়। রেললাইন থেকে সব ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি লাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। অন্যগুলোও আগামীকাল বুধবার নাগাদ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ট্রেন ট্রাফিকেরা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার