এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিনঃ
রাজনীতিকে যাহাবা পেশ হিসাবে গ্রহন করেছেন তাহারা সকলেই অত্যন্ত বিচক্ষন। তাদের মধ্যে প্রজ্ঞা, জ্ঞান, গরিমা দূরদর্শিতা এত বেশী দুই তিনশত বছর পূর্বে কখন কি কারনে দল তথা দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল তা যেমনি খবর রাখতেন ঠিক ভবিষ্যত রাজনীতি কিরূপ ধারন করতে পারে তার ও চিন্তা চেতনা তাদের দর্শন খোজলে পাওয়া যায়। যেমনঃ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আকরাম খাঁ, ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রমুখ। বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের বলতে চাই এদরে জীবনী পড়ুন, শিখুন। “একশ বছরের রাজনীতি” লেখক আবুল আসাদ এবং আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” লেখক আবুল মনসুর আহমদ রচিত অনেক তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ যা রাজনীতিবিদদের পাঠ করা জরুরী। এই দুটি বই বাংলাদেশের প্রতিষ্টিত যেকোনো লাইব্রেরিতে পাওযা যায়। কাহার কি অবদান তা কিন্তু অনেকটা কালের স্বাক্ষী হয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে সঠিক ও সত্য প্রকাশ করে, আপনি যেমনি উপকৃত হবেন ঠিক ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সঠিক ইতিহাস জানার জন্য আগ্রহী হবেন। কারন সমাজ বিজ্ঞান এর ভাষায় বিজ্ঞান দুই প্রকার। প্রানীবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান। প্রানী বিজ্ঞান সৃষ্টি নিয়ে যাহারা গবেষনা করে থাকেন। সমাজ বিজ্ঞান গবেষনা করা সকলের কাছে সম্ভব নহে। যেমনঃ প্রানীবিজ্ঞান গবেষকদের একজন যেমন ডাক্তার ভূল চিকিৎসা করলে রোগি কিন্তু একজনই মৃত্যু বরন করবে। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞান গবেষকদের যে কোনো একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির অশালীন রুচিপূর্ন কথা বা ভূল সিদ্ধান্তের কারনে গোটা জাতি তথা ১৭ কোটি জনগন ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য।
সুতরাং বিচক্ষন, প্রাজ্ঞ ও পন্ডিতরাই রাজনীতিবিদ হওয়া উচিত। তাদের থাকতে হবে পারিবারিক ঐতিহ্য, ধন সম্পদ, প্রাচুর্য্য ইত্যাদি। এসব ধন সম্পদ সাধারন জনগনের মধ্যে স্বার্থ ছাড়া বিলিযে দেওয়ার মানসিকতার রুচিবোধ থাকতে হবে। কারন প্রথমেই বলেছি পারিবারিক ঐতিহ্যে যাহাতে কোনোধরনের দাগ না লাগে, সে জ্ঞান থাকতে হবে।
ইতিহাস বড় নিষ্টুর। যাহারা দ্ব্যার্থহীনভাবে নিজ স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে কল্যান মূলক রাজনীতি করে গেছেন তাদের কথা সঠিক কলমওয়ালারা ফেরি দিয়ে স্মরন করবেন ও লিখবেন। নতুবা এসব জ্ঞান পাপীদের ইতিহাস ক্ষমা করবে না। যাহারাই ইতিহাস পড়েছেন, শিখেছেন এবং সাধ্যমত তা বাস্তবায়নে সংশোধিত হয়ে কর্মক্ষেত্র তৈরি করে জনগনের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাদেরকে চাইলেও ইাতহাসের আস্তকুড়ে নিক্ষেপ করা যাবে না । ক্ষমতা ক্ষনস্থায়ী কিন্তু কর্মমূল্যায়ন চিরস্থায়ী। জোর পূর্বক অনেক কিছু করা যায় কিন্তু ভালোবাসা অর্জন অত্যন্ত কঠিন ও দুরুহ। ভুমি জবর দখলের ক্ষমতা আছে। কিন্তু হৃদয়কে জবর দখল করা যায় না। বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বলতে শুনা যায়, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এ ধারনাটি সম্পূর্ন ভুল। ১৯৭০ সাল! যাহার নেতৃত্বে যে দেশটি স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল। যে এজেন্ডা বা কর্মসূচির ভিত্তিতে সাধারন জনগন একত্রিত হয়ে স্বশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম ঝাপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিলো। বলতে গেলে ৯৯% মানুষই স্বাধীনতার পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিল। নতুবা এত অল্প সময়ে ইতিহাসে কোন দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে, ইতিহাস তাল্লাশি করে বাইনকোলার দিয়ে খোজলে পাবেন তা কিন্তু আমার জানা নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে অবিসংবর্ধিত নেতা স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সাল! ভয়াবহ হত্যাকান্ডে! ৫৫৫৯৮ বর্গমাইলের সাধারন জনগন কোথায়! সেনাবাহীনির প্রধান কে.এম. শফিউল্লাহ, বিমান বাহীনির প্রধান এ.কে খন্দকার, রক্ষি বাহীনির প্রধান তোফায়েল আহমদ সহ অনেকে এখনও জীবিত। রাজনীতিবিদদের মধ্যে অগ্নীকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু সহ তাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা এখন ও জীবিত আছেন। তাদেরকে কি জিজ্ঞাসা করা যায় না ? ইতিহাসের সত্যি বেরিয়ে আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবেন, সংশোধিত হবেন। কি কারনে এ নিঃশংস হত্যাকান্ডটি ঘটেছিলো?
বাম— অতিবাম এবং কিছু নিবোধ ইতিহাস রচনাকারী নানকার বিদ্রোহকে তাদের রাজনৈতিক বিজয় হিসাবে দাবী করতে চেষ্টা করে থাকেন। অথচ ঘটনাটি সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত বিষয় ছিল। যেমন: ১৯৪৯ সালে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন বাস্তবায়ন না কি তাদের কৃতিত্ব? বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ কমরেড এডভোকেট অজয় ভ্রট্টাচার্য অত্যন্ত প্রাজ্ঞ: বিচক্ষন উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চ বংশীয় পেশায় আইনজীবি রাজনিতিবিদ ছিলেন। অজয় ভ্রট্রাচার্যের বোনের সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের নুরুল ইসলাম চৌধুরী কর্ত্তৃক প্রেম, ভালোবাসা, অতঃপর বিয়ে এর কারনে বিরোধের সূত্রপাত।অজয় ভ্রট্রাচার্য্য বাজি ধরেন, তাদের জমিদারি তথা সম্পূর্ন পূর্ব পাকিস্তানে জমিদারী উচ্ছেদ করে প্রজাম্বত্ব আইন বলবৎ করবেন। যেই কথা সেই কাজ। শুরু করলেন কুট কৌশল। সেই কৌশলে মুসলিম নেতা পরাজিত হলেন। প্রজাম্বত্ব আইন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাধ্যমে আইনে পরিনত হল। দখল যার ভূমি তার এ নীতি বাস্তবায়িত হল। অজয় ভ্রট্টাচার্যের এ আন্দোলনের সাথে একাত্নতা ঘোষনা করলেন কমরেড বরুন রায়, কমরেড মনি সিং প্রমুখ। এ আন্দোলনকে বাম ঘরানোর রাজনীতিবিদরা নামকরন করেছেন ” নানকার বিদ্রোহ নামে। মুসলিম জমিদারের ভুলের কারনে গোটা দেশের জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয়েছিলে। সেখানেই রাজনিতিবিদের জয় হল।
ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপস। পেশায় আইনজীবি। করেন রাজনীতি। তাঁহার পিতৃতুল্য সিনিয়র আইনজীবিদের কটাক্ষ ও দাম্বিকতা দেখাতে গিয়ে আইনজীব সমাজকে করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। বিচারাঙ্গনকে করেছেন কালুসিত। মাননীয় আদালত বিজ্ঞ আইনজীবীকে যথাযথ সম্মানের সাথে সম্বোধন করে কথা বলেন। প্রশ্ন হচ্ছে এস.কে সিনহা (স্যার)কে সাধারন জনগন জানত সরকারের দেওয়া তথ্য মতে, ক্যন্সারে আক্রান্ত হয়ে বাংরাদেশ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন।
কিন্তু ব্যারিস্টার সাহেব দাম্ভিকতার সাথে বলে দিলেন, একজন চীফ জাষ্টিসকে নামিয়েছি………… সাধু সাবধান! এর দায় কিন্তু রাজনীতিবিদদেরই সুদীর্ঘকাল বহন করতে হবে। গনতন্ত্রের মানষ পুত্র আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, Government of the people, by the people, for the people. এই মানষ পুত্রকে একটি সভায় অতি সাধারন এক ব্যাক্তি প্রশ্ন করলো! প্রেসিডেন্ট থামুন! মুচি বেটা! আবার বেশি উপদেশ দিচ্ছেন তা কিন্তু মানায় না। প্রেসিডেন্ট লিংকন উত্তরে বলেছিলেন, আমার পিতা ও মুচি ছিলেন, আমি ও মুচি! সভাশেষে থামবেন। আপনার জুতা পরিষ্কার করে দিবো। কারন এটা আমার এবং আমার পূর্বপুরুষের পেশা। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানী। এর নামই গনতন্ত্র। দাম্বিকতা কি গণতন্ত্রের ভাষা হতে পার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আদালত হচ্ছে সাধারন জনগনের নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল। ইমরান খান আদালতে বিচার প্রার্থী হলেন। ন্যায় বিচার পেয়েছেন। সাধারন জনগন কি চায় তা কিন্তু আদালত বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে আইন আছে, আদালত আছে, ব্যারিষ্টার সাহেবের দাম্বিকতার জন্য স্যুয়োমোটু আইন আছে। স্ব-প্রনোদিন হয়ে ব্যারিষ্টার সাহেবকে ভদ্রভাবে তালব করতে পারতেন কিন্তু করেন নি।কতৃপক্ষ বিরাগভাজন হলে হয়তঃ চাকুরী চলে যেতে পারে। আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সাধারন জনগন ক্ষুদ্ধ হয়ে বলে ক্যাঙ্গারু কোর্ট।
লেখকঃ সভাপতি- সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার