Daily Jalalabadi

  সিলেট     শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কিছু কথা” (পড়া আপনার আগ্রহ, লেখা আমার কর্তব্য)

admin

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩ | ০১:১৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ | ০১:১৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
“প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কিছু কথা” (পড়া আপনার আগ্রহ, লেখা আমার কর্তব্য)

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহন করিবেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি। ছিলেন গনতন্ত্রের মানুষ কন্যা। দলীয় নেতা কর্মীরা আপনার পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে রক্তের বিনিময়ে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বানিয়েছিল। নেতা সাধারর জনগনের পাল্স বুঝতে পেরে ভোট এবং ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার দাবী নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাধারন জনগন নেতারা কথায় বিশ্বাস করে স্ব-শস্ত্র যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। লক্ষ মানুষ প্রান দিয়েছিল। নেতাকে ক্ষমতার সর্বোচ্ছ শিখরে পৌছে দিয়েছিল। সাধারন জনগণ কি উপহার পেয়েছিল? সবাই জানি, উপহার পেয়েছিল দুর্ভিক্ষ! দুর্ভিক্ষ নিয়ে যতই গলাবাজি করেন না কেন? সাধারন জনগন নেতাকে ভুলে গিয়েছিলেন কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর আপকর্মের কারনে। সাধারন জনগন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সেই ১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষের কারনে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
১৯৮১ সালে বিদেশের মাটি থেকে বাংলাদেশ ফিরে আসলেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আপনাকে সভাপতির আসন অলংকৃত করল। স্বৈরাচর বিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন। উপাধি পেলেন গনতন্ত্রের মানষ কন্যা। আপনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে ১৯৮৬ সালে ৮ দল, ৭ দল, ৫ দল, জোট বদ্ধ হয়ে চট্রগ্রামের লালদীঘির ময়দানে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী সমাবেশ হল। উক্ত সমাবেশে স্বৈরাচরের পেটুয়া বাহিনী স্বশন্ত্র আক্রমণ ও হত্যাকান্ড চালাল। নিহত হল সাধরন জনগন। প্রায় ৩৫ জন লোক প্রান হারাল। যেহেতু উক্ত স্বৈরাচার বিরোধী সমাবেশের প্রধান নেতা ছিলেন, সেহেতু উক্ত সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিলেন, এরশাদের অধীনে কোন নির্বাচনে যাব না, যাব না। যিনি এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন, তিনি হবেন জাতীয় বৈঈমান। কিন্তু হয়! সাধারন জনগনের আপনার কথায় বিশ্বাস করেছিল। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে একমাত্র আপনিই কথা রক্ষা করতে পারেন নাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়াদা ভংগ করে গেলেন। পেলেন মাত্র ৮৬টি সংসদীয় আসন।ঐ সমাবেশে ৭ দলীয় ঐক্য জোটের নেত্রী ছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আপনার নির্বাচনে না যাওয়ার আপনার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে একমত পোষন করেছিলেন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কিন্তু ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাহার পুরুষ্কার পেয়েছিলেন স্মরণকালের ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারন জনগন নির্বাচিত করেছিল বাংলাদেশর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। সাধারন জনগন ছাড় দেয় কিন্তু কাউকে ছেড়ে দেয় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
মাগুরায় উপ নির্বাচন হল। সেই সংসদীয় আসনে মেজর জেনারেল মাজেদ (আবঃ) তাহার মৃত্যুতে শুন্য আসনে নির্বাচন হল। ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে আপনার দলকে পরাজিত করা হল। বাংলার ইতিহাসে মাগুরা মার্কা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম কেয়ার টেকার বা তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের রূপ রেখা দিলেন। সেই রূপরেখা বাস্তবায়িত হল আপনার নেতৃত্বে।
সংবিধান সংশোধিত হল বেগম জিয়ার নেতৃত্বে। সংবিধানে স্থানে করে নিল তত্ত্বাবধায়কের ফর্মলা। জনগন হাফ ছেড়ে বেঁচে গেল। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। আপনার নেতৃত্বে এই তত্ত্বাবধায়ক ফর্মুলাটি বাস্তবায়নে ১৭৩দিন হরতাল হল। অনেকে প্রান দিয়েছে। সেই আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেই ১৭৩ দিন হরতালের কথা ভূলে গেলেন। মাননীয় আদালতকে ব্যবহার করে ১৭৩ দিনকে ভুলে গিয়ে তত্ত্বাবাধয়ক ব্যবস্থা সংবিধান থেকে তুলে দিলেন। সেটা কি ঠিক হল? জনগন আপনার আচরনে ক্ষুদ্ধ। যেহেতু এখন ও আপনার নেতৃত্বে দল এবং সংসদ পরিচালিত হচ্ছে, সেহেতু দল ও দেশকে বাঁচাতে কিছু প্রস্তাব না তুলে ধরছিঃ
প্রথমত: ওবায়দল কাদের সাহেব আশংকা ব্যক্ত করেছেন, দল ক্ষমতাচ্যুত হলে, দেশের অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে। তিনি কে কোন সোর্স তত্ত্ব দিতে পারে। আর তার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই আশংকা থেকে বাঁচতে হলে জরুরী ভিত্তিতে ইতিহাস স্থাপন করুন। তত্ত্বাবাধায়ক বা যে কোন নামে সংসদ ডেকে বিল পাস করুন। কেননা বর্তমান প্রজন্ম ভোট কিভাবে দিতে হয় তা কিন্তু জানে না। ৩০/৩৫ বছরের ছেলে মেয়েরা। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সুব্যবস্থা করুন। এখানে সংবিধানের দোহাই দিয়ে রক্ষা পাবেন না। সংবিধান তো মানুষের জন্য। স্মরন করিয়ে দিতে চাই, বৃটেনে কোন লিখিত সংবিধান নেই। “তাদের আছে ম্যাগনা কার্টা”। ৫ বৎসর ম্যায়াদে যুক্তরাজ্যের সংসদ ৩ জন প্রধানমন্ত্রীকে পরিবর্তন করেছে। গনতন্ত্রের মূল ভিত্তি সার্বোভৌম সংসদ। রাবার ষ্টাম্প মার্কা সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করুন।
দ্বিতীয়তা: বৃটেন, আমেরিকা, ভারত সেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তাদের আদলে নির্বাচন কমিশনারকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়ে বিল আনুন। বহির্বিশ্বে আমাদেরকে নিয়ে হাসাহাসির বা খবরদারির পথ রুদ্ধ করুন। কেননা বর্তমানে এ দেশের জনগন নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সাধারন জনগনকে আস্থায় আনুন।
তৃতীয়ত: ক্ষমতা ক্ষনস্থায়ী, ইতিহাস স্থায়ী। দেশের সার্বিক অবস্থা অস্থিতিশীল। এ বিরাজমান সমস্যা থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে হচ্ছে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন। আর এই জবাব দিহিতা নিশ্চিত করতে আপনার নেতৃত্বে সংবিধান সংশোধান করার একক ক্ষমতা আছে। বর্তমান সংসদে সংসদ সদস্যগন আপনার অনুকম্পা বা দয়ায় মনোনীত সদস্য। নির্বাচিত নহে। সুতরাং কাহর ও দুঃসাহস নেই আপনার বিরুদ্ধে আবস্থান নেওয়ার।সংবিধান সংশোধন করা আপনার জন্য মাত্র সময়ের ব্যাপার। আর এটা করতে পারলেই আপনি হবেন ইতিহাসের মহানায়ক।
ধন্যবাধান্তে,
আপনার শুভাকাংখী
লেখক: এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন