স্টাফ রিপোর্টার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের একটি পাহাড়ি বাড়ি থেকে ১০ ‘জঙ্গিকে’ আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শনিবার (১২ আগস্ট) ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ।
আটককৃত ‘জঙ্গিরা’ হলেন- সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তার মেয়ে মোছা. হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার কানলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), খায়রুলের স্ত্রী মেঘনা (১৭), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোর জেলার সদর থানার চাদপুর গ্রামের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি থানার নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী মোছা. সানজিদা খাতুন (১৮)।
এছাড়া তিন শিশুকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হচ্ছে- নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের খায়রুল ইসলামের মেয়ে আবিদা (১), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে হুজাইফা (৬) ও জুবেদা (১৮ মাস)।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে বেশ কিছু পাহাড়ি সরকারি জমি রয়েছে। স্থানটি নির্জন। এর মধ্যে কিছু জমি রফিক মিয়া নামের দুবাইপ্রবাসী স্থানীয় এক বাসিন্দার দখলে। আটক জঙ্গিরা প্রায় তিন মাস আগে রফিক মিয়ার কাছ থেকে সাত লাখ টাকায় ৫০ শতক জমি কিনে বসতি স্থাপন করেন।
কর্মধা ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- ‘জঙ্গিদের তৎপরতার বিষয়ে আমাদের জানা ছিলো না। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে বলতেন- নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখানে এসে বাড়ি বানিয়েছেন। তাঁরা প্রায়ই গভীর জঙ্গলে ঢুকতেন। সেখানে কী করতেন, এলাকার কেউ সেটা জানতেন না।’
পুলিশ জানায়, আটক হওয়া ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এটি নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন। এর মূল ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। সংগঠনের এক সদস্যকে সম্প্রতি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সংগঠনটির সদস্যদের গড়া এ আস্তানায় যাঁরা আসা-যাওয়া করতেন, তাঁদের পরিচয়ও পাওয়া গেছে।
শনিবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযান শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
এসময় তিনি বলেন- ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের নির্জন পাহাড়ি বাড়িতে দুই মাস আগে আস্তানা গেড়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেখানে বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রীর পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য মজুত করেছিলেন তাঁরা। আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে তিন কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেট, কয়েক বস্তা বই, ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বুট ও বক্সিং ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটকদের মধ্যে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের স্ত্রীও রয়েছেন। ওই চিকিৎসাকে নাম সোহেল তানজিম। গত ২৬ জুলাই থেকে তিনি স্ত্রী মায়েশা ইসলামসহ নিখোঁজ হন। শনিবারের অভিযানে মায়েশাকে পুলিশ আটক করতে পারলেও চিকিৎসক সোহেল পালিয়ে গেছেন। সোহেল সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। ওই বাড়িতে তিনি উপস্থিত থাকলেও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান।
আটকের পর ১০ জঙ্গিকে ঢাকায় নিয়ে গেছে পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার