স্টাফ রিপোর্টার:
বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও অবৈধ সংযোগ কমাতে সিলেটে বসানো হচ্ছে গ্যাসের সংযোগ মিটার। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসবেন। মিটারগুলো স্থাপন হলে গ্রাহকপ্রতি আগে থেকে প্রায় দুই ভাগ বিল কম আসবে বলে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গড় গ্যাস ব্যবহার ৬৬ ঘনমিটার থেকে ৪০ ঘনমিটারে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহকপ্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার। রোধ হবে গ্যাসের অন্য অপচয়ও।
এ প্রকল্পে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। স্মার্ট কার্ডভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তির মিটার রিচার্জ পয়েন্ট থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে রিচার্জ করা যাবে। রিচার্জের টাকা শেষ হলে থাকবে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের সুবিধা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশক থেকে যেসব সিঙ্গেল বার্নারের সংযোগ দেওয়া হয়েছে, এর বিশাল অংশ ডাবল বার্নার সংযুক্ত করে গ্যাস ব্যবহার করে আসছেন। কোম্পানির দেওয়া সিঙ্গেলের লাইনে ডাবল সংযোগ অবৈধ। মোট গ্যাস সংযোগের এক-তৃতীয়াংশের বেশি গ্রাহক সিঙ্গেল বার্নারের সংযোগ নিয়ে ডাবল বার্নার সংযোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিনের এমন অবৈধ সংযোগের বৈধতা দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকের ব্যবহারের বৈধতার পাশাপাশি কোম্পানির বিপণনেও স্বচ্ছতা আসবে। আর জিআই সংযোগ সংস্কার, মিটার স্থাপন সম্পন্ন হলে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সাশ্রয় নিশ্চিত হবে।
জানা গেছে, এ মিটার স্থাপন প্রকল্পে গ্রাহকের কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। সার্বিক ব্যয় বহন করছে গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফায় ৫০ হাজার গ্রাহকের সংযোগে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে প্রতিমাসে সাশ্রয় হওয়ার কথা কয়েক লাখ ঘনমিটার গ্যাস। এমন দাবি গ্যাস কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের।
জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী জানান- অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্যাসের অপচয়-সবই স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে প্রি-পেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে। গ্রাহকের অর্থ এবং কোম্পানির গ্যাস ও সাশ্রয় হবে। তবে এমন সম্ভাবনার মধ্যে খানিকটা সমস্যা সৃষ্টি করেছে রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত জিআই সংযোগ লাইন। পরীক্ষামূলকভাবে মিটার লাগানোর পর কোথাও কোথাও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে না। লাইন চেকিংয়ের পর সেই সমস্যাও চিহ্নিত হয়েছে। আশির দশকে মাটির নিচে স্থাপিত জিআই লাইন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। দ্রুত সেগুলোও সংস্কারের কাজে আমরা হাত দিয়েছি। এটা না হলে প্রি-পেইড মিটারের যথাযথ সুফল মিলবে না। সিঙ্গেল বার্নারের সংযোগে ডাবল বার্নার ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এবার তাদের ডাবল বার্নারের বৈধ অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি। আবেদন করতে বলেছি, অনেক আবেদন আসছে।
জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপক মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী জানান- মিটার সংযোগের সম্পূর্ণ খরচ কোম্পানি দিচ্ছে। এজন্য কেউ কোনো টাকা দাবি করলে সরাসরি অফিসে অভিযোগ জানাতে হবে।
প্রি-পেইড মিটার পাইলট প্রকল্পের পরিচালক লিটন চন্দ্র নন্দী জানান, প্রি-পেইড মিটার স্থাপন হলে শুধু কোম্পানি নয়, গ্রাহকরাও লাভবান হবেন। কম খরচে গ্যাসের সেবা পাবেন তারা। আর অপচয়ও রোধ হবে। গ্যাস ব্যবহারে উদাসীনতা, একটি ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে দিনভর চুলা জ্বালিয়ে রাখা, এটা আর হবে না। মিটার লাগানোর পর গ্রাহকরা নিজেরাই এখন গ্যাস ব্যবহারে সতর্ক।
গ্রাহকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মিটার স্থাপন কাজে নিয়োজিতদেরও কোনো টাকা দিতে হবে না। এরপরও কোথাও লেনদেনের অভিযোগ থাকলে গ্যাস অফিসে অবগত করার আহ্বান জানান তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার