Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ১৭ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জঙ্গি’ সংগঠনের টানে ঘর ছাড়া সিলেটের সেই তরুণ কোথায়?

admin

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩ | ০১:১১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩ | ০১:১২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
‘জঙ্গি’ সংগঠনের টানে ঘর ছাড়া সিলেটের সেই তরুণ কোথায়?

স্টাফ রিপোর্টার:
‘জঙ্গি’ সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দিয়ে ঘর ছাড়া সাত তরুণের এখনো সন্ধান মেলেনি। এর মধ্যে রয়েছে সিলেটের একজন। তাদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

 

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নতুন গড়ে উঠা ‘জঙ্গি’ সংগঠন। নিষিদ্ধ দুই জঙ্গি সংগঠনের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৫৫ তরুণ ঘর ছাড়েন। তাদের মধ্যে ৪৬ জনকে বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুজন পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণের সময় মারা গেছে খবর আছে। আর বাকি সাত তরুণ এখনো নিরুদ্দেশ।

 

তারা হলেন- সিলেটের শিব্বির আহমদ, নেত্রকোনার মো. আল মামুন, কুমিল্লার আব্দুর রাজ্জাক খান, পটুয়াখালীর নুর মোহাম্মদ জুয়েল, ঝালকাঠির মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. নাজমুল আলম নাহিদ এবং কুমিল্লার নাহিদ।

 

২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ তরুণ নিখোঁজ হয়। তাদের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। নিখোঁজদের উদ্ধারে গিয়ে র‍্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় থাকার তথ্য পায়।

 

র‍্যাব জানতে পারে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ওই বছরের অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসছে র‌্যাব।

 

এখন পর্যন্ত জঙ্গি সংগঠনটির আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদসহ ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য কেএনএফের ১৭ সদস্য গ্রেপ্তার হন। উদ্ধার করা হয় বিপুল বিস্ফোরক ও অস্ত্র।

 

দেশের শান্তিশৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

এছাড়া আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শারক্বীয়ার ব্যাংক হিসাব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তাও বন্ধ করার নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ।

 

র‍্যাব বলছে, শারক্বীয়ার আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিসের ওপর পড়াশোনা শেষ করে সিএনজি পাম্পে চাকরি করতেন। কয়েকজনকে নিয়ে তিনি হিন্দাল শারক্বীয়া গঠন করেন। সর্বশেষ তিনি নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আমির ছিলেন।

 

গত ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে বাহিনীটি। সেসময় জানানো হয়, দেশের মধ্যে হামলার পরিকল্পনা ছিল সংগঠনটির। তাদের টার্গেট ছিল কিলিং মিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছিলেন আমির মাহমুদ। তারা শারক্বীয়াকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠন বানাতে চেয়েছিল।

 

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বলছে, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ। এর আগে তিনি জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা ছিলেন। জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তখন কারাগারে বসে তিনি নতুন সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

 

২০১৯ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া গঠনের পর থেকে শামিন এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। গত ২৩ জুন সিটিটিসি তাকে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।

 

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নিরুদ্দেশ থাকা কয়েকজনকে আমরা খুঁজছি; অভিযান অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা গ্রেপ্তার এড়াতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আছে। এরই মধ্যে সংগঠনের নেতৃত্ব ও মধ্যসারির সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

 

নিরুদ্দেশ সশস্ত্র প্রশিক্ষণে থাকা তরুণরা নাশকতা করতে পারে কি না জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সেই সক্ষমতা তাদের নেই। কারণ, নির্দেশ বা পরামর্শদাতা সবাই গ্রেপ্তার আছে। তারা চাইলেও কোনো অঘটন ঘটতে পারবে না।’

 

পাহাড় ছেড়ে সমতলে চলে এসেছে কি না প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এমনই ধারণা করছি। তবে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছে।

 

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, নিরুদ্দেশ থাকা সাত তরুণ পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে। গত বছর সাঁড়াশি অভিযানের পর তারা পাহাড় ছেড়েছে। তবে তারা বর্তমানে কোথায় অবস্থান নিয়ে আছে শনাক্ত করা যায়নি। যদিও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মতো সক্ষমতা এখন আর তাদের নেই।

 

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা নিরুদ্দেশ হওয়া ৫৫ জন তরুণের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছিল। তাদের প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সাতজন এখনো নিরুদ্দেশ। তাদের গ্রেপ্তারে র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে তারা কোথায় অবস্থান করছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন