স্টাফ রিপোর্টার:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না এমনটি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলে থাকলে, তাকে ধরবেন।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটা কোনো কথা না। যখনই পণ্যের দাম বাড়ায়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই।’
মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দ্রব্যমূল্য নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য পড়েন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
এ পর্বে যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম প্রশ্ন করেন, সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক ধকল যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে লক্ষ্য করছি, নিত্যপণ্যের ব্যাপারে মৌসুমী ব্যবসা পরিচালিত হয়। মজুত আছে, সরবরাহ আছে, তারপরেও হঠাৎ করে জিনিসের দাম বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, ডাবের ক্ষেত্রে দেখলাম। রাতারাতি পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ১ হাজার টাকা দেখলাম। অনেক পণ্যের ব্যাপারে সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশে ব্যবসা করে মানুষের পকেট থেকে অনেক টাকা নেওয়া হচ্ছে।
সাইফুল আলম তার প্রশ্নে বলেন, সিন্ডিকেটের কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও বলেন। তারা বলেন, সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যায় না। সেখানে হাত দিতে গেলে বিপদ আছে। আমরা মনে করি, সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী। সরকার দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। এ নিত্যপণ্যের মৌসুমী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে কী না তা প্রধানমন্তীর কাছে জানতে চান তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিপদ আছে কে বলেছে, আমি ঠিক জানি না। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
তখন যুগান্তর সম্পাদক বলেন, দুজন মন্ত্রী বলেছেন, সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন? বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব তো। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউস ব্যবসা করে। যখনই তারা দাম বাড়ায় আমরা আমদানি করি, বিকল্প ব্যবস্থা করি। যাতে তারা বাধ্য হয় দাম কমাতে। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। কাজেই সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটা কোনো কথা না। কত শক্তিশালী সিন্ডিকেট আমি জানি না, আমি দেখব কী ব্যবস্থা করা যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক ছায়া সংসদে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিমের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে বলেন, ডিমের দাম আমরা ঠিক করতে পারি না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না। আমাদের জানার দরকার-ডিমের সঠিক দামটা কত? সেটা জানতে মন্ত্রণালয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মাঠে নামাতে পারে। তবে আমরা সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিলাম, তারা (সিন্ডিকেট চক্র) বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিল। তখন ভোক্তারা পণ্য পেল না। এজন্য আমাদের সবদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
এর আগেও বাণিজ্যমন্ত্রী নিত্যপণ্য নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারা পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দেবে। তখন ভোক্তা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ২৬ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তোপের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ করে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে সংসদে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কোনো কোনো সংসদ সদস্য তো সরাসরি বলেই ফেলেন যে, বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর যোগসাজশ রয়েছে।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার— আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটাও তো সইতে আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 997 বার