অনলাইন ডেস্ক:
এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশ শুরু করে টুর্নামেন্টের সহ আয়োজক শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বড় পরাজয় দিয়ে। এর পরে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে দাপুটে জয় তুলে নিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। কিন্তু সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে আবারও পরাজয়ের বৃত্তে। পাকিস্তানের সামনে দাড়াতেই পারেনি তারা।
ধনাত্বক-ঋণাত্বকের হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানরা আশা করতে পারেন এ ম্যাচে হয়তো আবারও জয়ের ধারায় ফিরবে বাংলাদেশ। কারণ হারলেই মোটামুটি আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু সেই জয়ের আশা পূরণে চ্যালেঞ্জ যে অনেক সেটাও ভালোই জানা ক্রিকেট সমর্থকদের। কী সেই চ্যালেঞ্জগুলো চলুন একটু চোখ বুলিয়ে নেই।
শান্তর অভাব কে পূরণ করবেন?
এবারের এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত রান সংগ্রহে সবার উপরে বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্ত। ২ ইনিংসে ৯৬.৫০ গড়ে তার রান ১৯৩। প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার সঙ্গে যেখানে দলের সবাই ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন, সেখানে একপ্রান্ত আগলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন। পরের ম্যাচেই আফগানিস্তানের সঙ্গে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক, ১০৪ রান করেন এ ম্যাচে।
তারপরই দুঃসংবাদ পায় বাংলাদেশ। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে এশিয়া কাপ শেষ হয়ে গিয়েছে নাজমুল শান্তর।
পরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার জায়গায় সুযোগ পান লিটন দাস। তিনি ফেরত যান ১৬ রান করে। বাংলাদেশ ৪৭ রান তুলতেই হারিয়ে বসে চার উইকেট।
দেশের টপ অর্ডার যখন নিয়মিতই ধুঁকছে সেই সময় তার অভাব এ ম্যাচে ভালোভাবেই বোধ করবে বাংলাদেশ। গত এক বছরে দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার তিনি, স্বাভাবিকভাবেই এই সময়টাতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানও তার।
ইনজুরিতে শেষ হয়ে গিয়েছে নাজমুল শান্তর এশিয়া কাপ।
টপ অর্ডার নিয়ে চ্যালেঞ্জ
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচে টপ অর্ডারে বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন ক্রিকেট প্রশিক্ষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
“শান্তর না থাকাটা বড় কনসার্ন, ও ফর্মে ছিল, আর ফাস্ট বোলিং খুব ভালো খেলে, তিন নম্বরে ভরসা করা যায় ওকে। এখন ও না থাকায় দল চাপে পড়ে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চিন্তার জায়গা টপ থ্রি ব্যাটার। সেক্ষেত্রে প্রথম ১০ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
গত এক বছরে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি সেঞ্চুরি পেরিয়েছে মোটে একবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে। এরপর ২য় সেরা জুটি এসেছে এই এশিয়া কাপে আফগানদের সঙ্গে নাঈম মিরাজের ৬০ রান।
এছাড়া বলার মতো স্কোর নেই শুরুতে। এই সময়কালে মোট ১৮ ইনিংসের মধ্যে আটবার দুই অংকের ঘরে যাবার আগেই উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে। তাই টপ অর্ডার যে চিন্তার জায়গা তা বলাই বাহুল্য।
এ ম্যাচেও শান্তর জায়গায় লিটনের খেলা নিশ্চিত বলা যায়। তবে ভাঙতে পারে আগের দুই ম্যাচের উদ্বোধনী জুটি।
ওপেনিংয়ে নাঈম শেখ থাকলেও মিরাজকে হয়তো আগের ৮ নম্বর পজিশনে খেলাবে দল। সেক্ষেত্রে বাঁ হাতি নাঈমের সঙ্গী হতে পারেন ডানহাতি লিটন।
আবার সাইড বেঞ্চে বসে থাকা বিজয়কেও বিবেচনা করতে পারে দল। তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় তিন নম্বর পজিশন নিয়ে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে চিন্তায় টিম ম্যানেজমেন্ট।
লোয়ার অর্ডার ব্যর্থতার সমাধান কী?
বাংলাদেশের চিন্তার জায়গা শুধু টপ অর্ডারই না। এবারের আসরে দুবারই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে দলের লোয়ার অর্ডার।
শ্রীলংকার সাথে ম্যাচের কথাই ধরুন, শেষ চার উইকেট পড়ে যায় মাত্র ২ রান তুলতেই, আর পাকিস্তানের সঙ্গে ৩ রান তুলতেই বাংলাদেশ হারায় শেষ চার উইকেট।
২ ম্যাচ করে খেলে শেষদিকে নামা আফিফ হোসেন আর শামীম পাটোয়ারির রান যথাক্রমে ১৬ আর ২৭।
ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম তাই মনে করেন টপ অর্ডারের মতো বাংলাদেশের টেলএন্ডেও সমস্যা।
“৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা বলে দেয় ব্যাটিংয়ে আস্থা নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। শেষের দিকে এত ব্যাটসম্যান। আফিফকে আটে খেলানো মনে হয় না ভালো আইডিয়া, ওর জায়গায় বোলিং করতে পারে এরকম কাউকে দরকার।”
চিন্তা আছে মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয়ের অফফর্ম নিয়েও। এবারের টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচে তার রান মাত্র ২২।
কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের কাছে তাই ধারাবাহিকতার অভাবকেই বড় মনে হচ্ছে। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ধারাবাহিকতার অভাব আমাদের চিন্তার বিষয়। এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি আমরা। ”
এসময় চান্দিকা হাতুরুসিংহে জানান দলের ১৭ জনের যে কারোই সুযোগ মিলতে পারে চূড়ান্ত একাদশে।
বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার কোন প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে।
টিম কম্বিনেশন পাওয়া যাবে?
পাকিস্তানের সঙ্গে ৭ উইকেটের বড় হারের পর ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সহকারী কোচ নিক পোথাস বলেছিলেন, তারা সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পেতে কাজ করছেন।
ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমও মনে করেন দলের বড় সমস্যা এখন কম্বিনেশনেই। দলে ব্যাটে-বলের ভারসাম্যের অভাব দেখছেন তিনি।
“আগে ৭ জন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান দেখা যেত, ১ জন অলরাউন্ডার থাকতো, ফলে বোলিং শক্তি থাকতো। কিন্তু এখন ৫ জন বোলার, ফলে বোলিংয়ে দুর্বলতা থেকে যায়। আজকের ম্যাচেও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ হবে ৬ নম্বর বোলারের অভাব পূরণ।”
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহেকে প্রশ্ন করা হয় মিরাজকে আবারও ওপেনিংয়ে দেখা যাবে কি-না। সেটার কোন স্পষ্ট উত্তর দেননি তিনি।
ফলে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার কেমন হবে সেই আলোচনা থাকছে আজকের ম্যাচেও, বিশেষ করে টপ অর্ডার। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে তিন ভিন্ন কম্বিনেশনে ৬ জন ব্যাটসম্যানকে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম তিন পজিশনে।
তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে শ্রীলংকার সাথে একজন বাড়তি বোলার নিয়ে নামে কি-না সেটাই দেখার।
ব্যাটসম্যানদের শট সিলেকশন নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
সমস্যাটা মানসিক চাপ?
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শট সিলেকশন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিক পোথাস যেটাকে বলেছেন, ব্যাটসম্যানরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
তাহলে সমস্যাটা কি মানসিক?
“মানসিক চাপে থাকলেই এরকম হয়। তবে এটা দেখার দায়িত্বও কিন্তু কোচদের। দায়টা তাদেরও নিতে হবে। তবে ক্রিকেটাররা যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু কাজে লাগাতে পারছে না। ম্যাচের পর ম্যাচ দল যেভাবে সাপোর্ট করছে মানসিক চাপ থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে দ্রুতই,”-বলেন নাজমুল আবেদীন।
এ কারণেই শ্রীলঙ্কার প্রধান বোলাররা যখন ইনজুরিতে তখন বাকিদের সামনে অসহায় হয়ে যাওয়ার দায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরই দিচ্ছেন তিনি।
উড়তে থাকা শ্রীলঙ্কা
অনন্য এক রেকর্ডের সামনে এখন স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এ ম্যাচ জিতলেই টানা ১৩ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়বে তারা। যা ওয়ানডে ইতিহাসে হবে ২য় সেরা। ২০০৩ সালে টানা ২১ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এই মুহূর্তে টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত থেকে পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা।
এছাড়া কলম্বোর প্রেমাদাসায় বাংলাদেশের সঙ্গে কখনো হারেনি শ্রীলঙ্কা, সেটাও বাড়তি প্রেরণা তাদের।
তবে পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বোলিং দুর্দান্ত হলেও লাহোরে গিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে লঙ্কান বোলাররা ভালো করতে পারে নি।
এ ম্যাচেও তাই ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
রিজার্ভ ডে নিয়ে চলছে বিতর্ক।
রিজার্ভ ডে বিতর্ক
গতকাল দিনভর আলোচনায় ছিল এশিয়া কাপে রিজার্ভ ডে বিতর্ক। টুর্নামেন্টের আগে ঘোষণা করা হয় শুধুমাত্র ফাইনালের জন্য রিজার্ভ ডে থাকছে। কিন্তু সুপার ফোরে এসে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় রোববারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের জন্য একদিন রিজার্ভ ডে রাখা হবে। যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
কারণ একই রকম বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে শ্রীলংকা-বাংলাদেশ ম্যাচেও। কিন্তু তাদের জন্য কোন রিজার্ভ ডে নেই। অর্থাৎ বৃষ্টিতে খেলা পণ্ড হলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হবে দু’দলকে।
টুর্নামেন্টের মাঝপথে এমন সিদ্ধান্ত অবাক হয়েছেন শ্রীলঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড।
আর চান্দিকা হাতুরুসিংহে বলছেন কোন টুর্নামেন্টে তিনি এমন দেখেননি যে একেক দলের জন্য একেক নিয়ম।
সূত্র: বিবিসি
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার