স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের সড়ক ও মহাসড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে ‘মৃত্যুফাঁদে’। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে কেউ হারাচ্ছেন প্রাণ, আবার কেউ হয়ে যাচ্ছেন সারাজীবনের জন্য পঙ্গু। চলতি মাসে সিলেটে অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। এর মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও রয়েছেন। বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ও সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীদের প্রাণহানী ঘটছে। লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ বাস চালক, মহাসড়কে অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল ও বেপরোয়াগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর ফলে দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের কাজলসার নোয়াগ্রাম এলাকায় পিকআপ ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে জয়নাল আবেদীন নামের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হন। তিনি ওই উপজেলার খাসেরা গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের সালুটিকর মিত্রিমহল এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল্লাহ ইসহাক ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম. হাফিজুর রশীদ নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল নিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তারা দুজন নিহত হন।
১৫ সেপ্টেম্বর সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের শাহবাগ মহিদপুর এলাকায় বাস ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। তারা হলেন- কানাইঘাট উপজেলার সুতারগ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও মাহাদী হাসান রাফাত। তারা আপন চাচাতো ভাই ও শিক্ষার্থী।
গত ১০ সেপ্টেম্বর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তাজপুর এলাকায় প্রাইভেট কার চাপায় মা ও ছেলের মৃত্যু হয়। রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেট কার চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকার শুক্কুর আলীর স্ত্রী সালমা বেগম ও তার ছেলে আবদুল কাইয়ূম।
একই দিন সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের চারখাইয়ে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ফখরুল ইসলাম নামের আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হন। তিনি কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের পারকুল বড়বাড়ির মৃত রইছ মিয়ার ছেলে ও রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। দুর্ঘটনায় অটোরিকশার আরও দুই যাত্রী আহত হন।
এছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুরমার তেতলীতে কাভার্ডভ্যান ও সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন আহত হন। এর মধ্যে রেজওয়ান আহমদ নামের এক যাত্রী গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সিলেটে ঘন ঘন দুর্ঘটনার জন্য হিসেবে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করছেন সচেতনমহল। এর মধ্যে অন্যতম মহাসড়কে অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল ও বেপরোয়াগতিতে মোটরসাইকেল চালনা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অবৈধভাবে দেদারছে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
অভিযোগ রয়েছে, মাসোহারার বিনিময়ে পুলিশ ‘ম্যানেজ’ করেই মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অটোরিকশা চালকদের নির্দিষ্ট টোকেন দেওয়া হয়ে থাকে। ওই টোকেন দেখিয়ে মহাসড়কে চলাচল করে অটোরিকশা। আর টোকেনবিহীন অটোরিকশা পেলেই মামলা ধরিয়ে দেয় পুলিশ।
এছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে ‘টিনএজার’দের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী।
সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও কারণ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্ল্যাহ জানান, সিলেটের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নানা কারণে ইদানিং দুর্ঘটনা বেড়েছে। সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে অনেকেই বেপরোয়াগতিতে গাড়ি চালায়। রাস্তা ভাল হওয়ায় পর্যটকরা এই মহাসড়কে গতিসীমা মানেন না। সিএনজি অটোরিকশাগুলোও চলে বেপরোয়াগতিতে। তাই দুর্ঘটনা ঘটছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙা রয়েছে। তাই চালকদের আঁকাবাঁকাভাবে গাড়ি চালাতে হয়। বৃষ্টি হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়েও দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া এই মহাসড়কে প্রচুর পরিমাণ থ্রিহুইলার অবৈধভাবে চলাচল করে। এসব গাড়ির চালকদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। পথচারীরাও অনেকসময় অসচেতন হয়ে রাস্তাপারাপার করতে গিয়ে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া সকল সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়াগতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেটও পরেন না।
মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল প্রসঙ্গে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনই অভিযান হয়। মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না অটোরিকশা চলাচল। এছাড়া কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফৌজদারি মামলা হচ্ছে। ভিকটিম বা তার পরিবার মামলা না করলে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার