স্টাফ রিপোর্টার:
সম্প্রতি ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছিল সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকাতে। কয়েকদিনের ব্যবধানে পরপর দুইটি বড় ডাকাতির ঘটনা নগরবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, নানা তৎপরতা চালিয়েও কোনভাবেই যেন বাগে আনা যাচ্ছিল না এই ডাকাত দলকে। ডাকাতির ধরণ দেখে ধারণা করা হচ্ছিল কাজগুলো একই ডাকাতদলের হতে পারে। আরও ধারণা ছিল যে এই ডাকাতদল খুবই সংঘবদ্ধ এবং তাদের খুব চৌকস একজন দলনেতা রয়েছে। পুলিশকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছিল এই দলটি। তবে পুলিশও ছেড়ে কথা বলবে কেন? লেগেই ছিল!
দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের পাশাপাশি ডাকাতদের খোঁজে রাতদিন নির্ঘুমভাবে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে কাজ করছিল মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা। থানা পুলিশ আর গোয়েন্দা পুলিশ উভয়ের তদন্তে একটি নাম বারবার উঠে আসছিল। দুটো ডাকাতিরই প্রধান আসামী ফজর আলী ওরফে বাটন!
এতো স্মার্ট ও ধুরন্ধর এই ডাকাত সর্দার যে ডাকাতির পর কোন ক্লু রেখে যান না তিনি! তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায়ও খুব একটা খুব একটা সুবিধা করা যাচ্ছিল না। কারণ এই অতি ধুরন্ধর ডাকাত সর্দার এতোই সতর্ক যে তিনি বা তার দলের কেউ কোন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করেন না ডাকাতির আগে কিংবা পরে। তাই পুলিশকেও আগাতে হচ্ছিল তদন্তের পুরনো পদ্ধতি অনুসরণ করে। পরপর দুটি সফল ডাকাতির পর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এই ডাকাতদল আরেকটি ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে – এই খবর কোনভাবে পেয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ!
নগরীর কাজীরবাজার ব্রিজ যেটি সেল্ফি ব্রিজ নামে অধিক পরিচিত সেই ব্রিজের উপর দিয়ে পার হবে এই খবর ছিল। ব্রিজের আশেপাশে তাই ওত পেতে ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ তার দল। সকাল থেকে তার অপেক্ষা করতে করতে আশার আলো সব ফুরিয়ে আসছিল। সবাই যখন আশা ছেড়ে দিচ্ছিল তখন হুট করেই অতি আকাঙ্ক্ষিত ‘বাটন’ এর দেখা পেয়ে গেলেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। অতিদ্রুতই ধুরন্ধর বাটন ঘটনা টের পেয়ে যান। বাটন ও তার সহযোগী পালাতে শুরু করলে তাকে জাপটে ধরে ফেলেন এক পুলিশসদস্য। সাথে সাথেই আশেপাশে ওত পেতে থাকা বাকি সদস্যরা তাকে ধরে ফেলে। কিন্তু হার মানতে যেন নারাজ অতি পরাক্রমশালী ডাকাতসর্দার। আট সদস্যের সাথে ধস্তাধস্তি করে তাদেরসহ নদীতে ঝাপ দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে রণে ক্ষান্ত দেন। তার সহযোগীকে আশেপাশে থাকা লোকজন ধরে ফেলে। অনেক চেষ্টার পর এই দলের আরেক সহযোগীকে ধরতে সক্ষম হয় দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ।
ফজর আলী ওরফে বাটন ও তার সহযোগীদের ধরা পড়াতে গত কয়েকদিন ধরে আতঙ্কে থাকা সিলেট নগরবাসী স্বস্তির বিশ্বাস ফেলবে। সেই সাথে হয়তো এই নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য যারা জীবনবাজি রেখে রাতদিন খেটে যায় তাদেরকেও একটু স্মরণ করবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার