সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক নওমুসলিম স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে জামালগঞ্জ উপজেলা ভীমখালি ইউনিয়নের কামলাবাজ গ্রামে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আহত স্বামী গ্রামের হোসেন আহমদের ছেলে সোয়েব আহমদ (১৯) সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা যায়। অভিযুক্ত নওমুসলিম কিশোরী স্বর্ণালী রানী দাস বর্তমান নাম মোছা. সাবা বেগম একই ইউনিয়নের কলকতখাঁ গ্রামের ধরণী কান্ত দাসের মেয়ে।
জানা যায়, কামবাজ গ্রামের কিশোর সোয়েব আহমদ (১৯) এর সাথে পার্শ্ববর্তী কলকতখাঁ গ্রামের সনাতন ধর্মালম্বী স্বর্ণালী রাণী দাসের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। প্রেমের সম্পর্কের স্থায়ি রূপ দিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে হলফনামার মাধ্যমে স্বর্ণালী রাণী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নতুন নাম মোছা. সাবা বেগম রেখে একই দিন আরেকটি হলফনামার মাধ্যমে সোয়েব আহমদের সহীত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিশোর স্বর্ণালী প্রাপ্তবয়স্ক হলেও সোয়েব আহমদের বয়স বিবাহ উপযোগী না হওয়ায় বিবাহ রেজিস্ট্রার ছাড়াই ইসলামী শরিয়া মোতাবেক দাম্পত্যজীবন শুরু করেন দুজন। নওমুসলিম মেয়েকে বিয়ে করায় সন্তানের প্রতি অভিমান করে প্রবাসী স্বামীর পরামর্শে শহরে বোনের বাড়িতে চলে আসেন সোয়েবের মা কিবরিয়া আক্তার।
এদিকে কর্মসংস্থানের খোঁজে বাসায় রেখে ঢাকায় চলে যেতে চাইলে সোয়েবের সাথে বিরোধ বাঁধে স্ত্রী সাবা’র। সকালে ঢাকায় গার্মেন্টসে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ঘুমিয়ে পড়েন স্বামী সোয়েব আহমদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে হঠাৎ ঘরে থাকা দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী সোয়েবকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্ত্রী সাবা বেগম। এসময় আহত সোয়েবের চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে সাবাকে আত্মহত্যা থেকে বিরত রাখেন প্রতিবেশীরা।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাতেই সুয়েবকে সংকটাপন্ন অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোয়েবের মাথা, হাত ও বুকে ৫টি কাঁটা যখম রয়েছে।
এই ঘটনায় নওমুসলিম স্ত্রী সাবা বেগমকে আসামী করে জামালগঞ্জ থানায় মামলা করেন আহত সোয়েবের মা কিবরিয়া আক্তার।
এদিকে এই ঘটনায় অভিযুক্ত সাবা বেগমকে রহস্যজনক কারনে অসুস্থ দেখিয়ে জামালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করে মেয়ের পরিবার। পরে সোয়েবের মায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার বিকালে আদালতে হাজির করা হলে অভিযুক্ত স্ত্রীকে জামিন দেন বিচারক।
সোয়েবের পরিবারের দাবি আদালতে রহস্যজনক কারনে মামলার এফআইআর এর সাথে অভিযুক্ত সাবা বেগমের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করায় অপরাধী এই নারী সহজেই জামিন পেয়েছেন। এতে ন্যায় বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে দাবি মামলার বাদী কিবরিয়া আক্তার।
আহত সোয়েবের চাচা, নূর আহমদ বলেন, স্থানীদের কাছ থেকে শুনে আমি আমার ভাতিজাকে উদ্ধার করি। মেয়েটি বার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ভয়ে সাথে করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সদর থানা পুলিশকে অবগত করলে তারা এসে সরেজমিন দেখে যায়। পরে জামালগঞ্জ থানায় নিয়ে গেলে রহস্যজনক কারনে অসুস্থ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। যাতে মেয়ে সহজেই জামিন পেয়ে যায়।
এসব অভিযোগে বিষয়ে একাধিকবার স্বর্ণালী রানীর বাবা ধরণী কান্ত দাসের মুঠোফোন একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও ফোনকল সিরিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, সনাতন ধর্মালম্বী স্বর্ণালী রাণীর সাথে সোয়েব আহমদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন পূর্বে মেয়েটি বিয়ের দাবিতে ছেলের বাড়িতে চলে আসে। পরে হলফনামা করে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কোর্টে হলফনামা করে সংসার করে আসছিল। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সাথে মনোমালিন্য চলে আসছিল। এই ঘটনার জেরে এটি ঘটতে পারে। অভিযুক্ত স্বর্ণালী রানীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সে এখন জামিনে রয়েছে। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস বলেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। ঘটনার সত্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। অভিযুক্ত মেয়েটি জামিনে রয়েছে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার