স্টাফ রিপোর্টার:
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে অনার্সবোর্ড হয়তো নেই। কিন্তু রেকর্ডবুক তো রয়েছে নিশ্চয়ই। সেখানে যে কয়েক জন ভাগ্যবান ক্রিকেটারের নাম লেখা রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের তামিম ইকবাল একজন। এই মাঠে যে কয়েক জন ব্যাটার ব্যাট হাতে তিন অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছিলেন, তার মধ্যে তামিম ইকবালও রয়েছেন। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই মাঠেই তামিম ওমানের বিপক্ষে হাঁকিয়েছিলেন বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র সেঞ্চুরিটি। ৬৩ বলে ১০৩ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন বাংলাদেশের এই ওপেনার।
নিশ্চয়ই এবার ধর্মশালা বাংলাদেশ স্কোয়াডের মধ্যে তামিম ইকবালকে খুঁজে ফিরবে। বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে চূড়ান্ত নাটকীয়তা উপহার দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা ওপেনারকে বাদ দিয়েই দল ঘোষণা করা হয়েছিল।
তামিম ইকবাল না থাকুন, তার অনুপস্থিতির ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারেন দুই অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিম। নিঃসন্দেহে ক্যারিয়ারের বাতি নিভু নিভু করছে তাদের দুজনের। বয়স এবং শরীর তো আর দীর্ঘদিন খেলার জন্য তাদের অনুমতি দেবে না। মাহমুদউল্লাহর বয়স ৩৮ ছুঁই ছুঁই। মুশফিক ৩৬টি বসন্ত পার করে ফেলেছেন। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এবারের বিশ্বকাপই হয়তো এ দুজনের শেষ বিশ্বকাপ। এরপরই হয়তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দেবেন দুই ভায়রা ভাই।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়েও কম জলঘোলা করা হয়নি। তাকে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপে দল পাঠানো হবে—এটা ছিল প্রায় নিশ্চিত। না হয়, অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে অন্তত এশিয়া কাপ খেলানো হতো। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে যে কয়েক জনকেই দলে নেওয়া হয়েছিল, পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়েছিল, সবাই ফেল করেছেন। আফিফ হোসেন ধ্রুব, শামীম হোসেন পাটোয়ারী—কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেও চিন্তা করা হয়েছিল; কিন্তু কেউই আপ টু দ্য মার্ক নন। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার কাছেই ফিরতে হলো টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকদের। নিউজিল্যান্ড সিরিজে সুযোগ দেওয়া হলো মাহমুদউল্লাহকে। সুযোগটা কাজে লাগালেন তিনি। পারফরম্যান্স যাই করুন, নিবেদনের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিলেন। সে কারণেই বিশ্বকাপের দলে ঠাঁই হলো তার।
২০১৫ বিশ্বকাপের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর সেই বীরোচিত ১০৩ রানের ইনিংসটি এখনো চোখে ভাসে। কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশকে জিততেই হবে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচটিতে ব্যাটকে তলোয়ার বানালেন ইংলিশ পেসারদের সামনে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেঞ্চুরি পূরণের পর গ্যালারির উদ্দেশ্যে বাতাসে ছেড়ে দেওয়া তার উড়ন্তু চুমুটির দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। ঐ গ্যালারিতে বসা ছিলেন মাহমুদুল্লাহর স্ত্রী এবং সন্তান। সেঞ্চুরিটি তাদেরকেই উত্সর্গ করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশও ঐ ম্যাচে পেয়েছিল ১৫ রানের জয়। ম্যাচ-সেরা হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
পরের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে খুব কম ক্রিকেটারেরই। তাদের মধ্যে একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এবার ধর্মশালাতেই সেই ইংলিশদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ১০ অক্টোবর হবে কি আবারও সেই উড়ন্ত চুমু? ২০১৫ অ্যাডিলেড থেকে ২০২৩- ধর্মশালা। গল্পটা কী আবারও একই হতে পারে না। চিত্রিত হতে পারে না, একই দৃশ্যপট? তাহলে ক্যারিয়ারের শেষটা দারুণ এক স্মরণীয় ঘটনা দিয়ে রাঙাতে পারবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মুশফিকুর রহিমের দলে জায়গা পেতে হয়তো তেমন সমস্যা হয়নি। বিতর্কহীনভাবেই তিনি বিশ্বকাপের দলে এসেছেন। ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন হয়ে ৬ নম্বরে চলে গেলেও সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছেন এবং এই পজিশনে নিজেকে খাপ খাওয়ানোরও জোর প্রচেষ্টা রয়েছে তার। রানও পাচ্ছেন। সে কারণেই মিস্টার ডিপেন্ডেবলের ওপর এখনো আস্থা রাখতে পারছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
বিশ্বকাপে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছার গৌরব আছে মুশফিকুর রহিমেরও। ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। যদিও ম্যাচটিতে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৮১ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছিল। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে কী মুশফিক পারবেন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা রাঙিয়ে দিতে?
২০০৬ সালে ক্যারিয়ার শুরু মুশফিকুর রহিমের। ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকে টানা খেলেছেন বাংলাদেশ দলের হয়ে। যে কারণে সাকিব, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তিনি। পঞ্চ পাণ্ডবের তিন পাণ্ডেবর এক জনও। এখনো পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন ২৫৬টি। আর বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলেছেন ২৯টি। বিশ্বকাপে ২৮ ইনিংসে ব্যাট করে মুশফিকুর রহিমের সংগ্রহ ৮৭৭ রান। ৩৮.১৩ গড়ে রান করেছেন তিনি। সেঞ্চুরি ১টি এবং হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৬টিতে। সর্বোচ্চ রান ১০২*। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মোট ৫টি সেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে একটি মুশফিকের। বাকি দুটি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ এবং সাকিব।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিক ২৫৬ ম্যাচে ৩৭.০৮ গড়ে রান করেছেন ৭৪০৬। সর্বোচ্চ রান ১৪৪। সেঞ্চুরি ৯টি এবং হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৪৬টি। ক্যারিয়ার সায়াহ্নে এসে মুশফিকের ব্যাট যদি জ্বলে ওঠে, তাহলে নিজের যেমন গৌরব বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দেশের সম্মানও তিনি বাড়িয়ে তুলতে পারবেন বিশ্বমঞ্চে।
একই কথা খাটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্ষেত্রেও। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। এখনো পর্যন্ত খেলেছেন ২২১ ম্যাচ। আর বিশ্বকাপে খেলেছেন ১৭টি ম্যাচ। বিশ্বকাপেই তার ব্যাট সবচেয়ে বেশি কথা বলেছে। ১৭ ম্যাচে ৫১.৩৩ গড়ে তিনি রান করেছেন ৬১৬। সর্বোচ্চ ১২৮ অপরাজিত। সেঞ্চুরি ২টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ২টি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহ ২২১ ম্যাচে ৩৫.৩৫ গড়ে রান করেছেন ৫০২০। সেঞ্চুরি ৩টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ২৭টি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার