স্টার রিপোর্টার:
সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজন সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে মহানগর দায়রা জজ এ. কিউ. এম. নাসির উদ্দীন আদালতে জেরা করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আল মামুনকে।। মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৬ জন সাক্ষ্য গ্রহণ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়হান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যরিস্টার মোহাম্মদ আবুল ফজল চৌধুরী।
সিলেটে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন (১১ অক্টোবর) সকালে তিনি মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছিল। মামলার তিন বছর পর সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। তবে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আগে আসামিরা মামলা আপস করতে ৫০ লাখ টাকার লোভ দেখিয়েছে রায়হানের পরিবারকে- এমন অভিযোগ মা সালমার।
নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন- রায়হানের মৃত্যুর মাত্র ১৫ মাস আগে বিয়ে করেছিল। রায়হান মারা যাওয়ার দুই মাস আগে তাঁর একমাত্র মেয়ের জন্ম হয়েছিল। নাতনি আলফা আক্তারের বয়স এখন তিন বছর। মেয়েটি বাবার আদর ছাড়াই বড় হচ্ছে। সে কোনো দিন বাবা ডাকতে পারবে না। এমন চিন্তা মাথায় এলে ঘুম আসে না, খেতে রুচি হয় না।
সালমা বেগম আরও বলেন, ‘আসামিরা সাক্ষ্য গ্রহণের আগে মামলা আপস করতে ৫০ লাখ টাকার লোভ দেখিয়েছে। তবে আমরা লোভে পা দিইনি। আশা করছি, আমরা ন্যায়বিচার পাব। সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ- ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর (দিবাগত) মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)। গত বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলায় সর্বশেষ সাক্ষ্য দিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩–এর বিচারক শারমিন খানম।
মামলায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছে। তবে অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল নোমান এখনো পলাতক। বাকি চার আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করেছে পুলিশ।
এদিকে মামলার প্রধান অভিযুক্ত সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির পিটিশন দাখিল করেছেন।
রায়হান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম এ ফজল চৌধুরী আশা প্রকাশ করে বলেন- মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হবে। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার