শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি:
দেশের আগাম শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ইছামতী চা বাগানের মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরে। প্রতিবছর এই মন্দিরে দুর্গা পূজার ছয়দিন আগ থেকেই আগাম দুর্গাপূজা শুরু হয়। প্রতিদিন একটি করে নয়দিনে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা করা হয়।
রোববার সকালে দেবী দুর্গার ৯টি রূপের মধ্যে দেবী দুর্গার (প্রথম রূপ) শৈলপুত্রী রূপে পূজা করা হয়। এভাবে পৌরাণিক নিয়ম অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ড, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী রূপের পূজা করা হবে। ২৪ অক্টোবর হবে দেবীর বিসর্জন।
নবদুর্গা বলতে আভিধানিক ভাবে দেবী পার্বতীর দুর্গার রূপের ৯টি রূপকে বোঝানো হয়৷ হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এগুলো দেবী পার্বতীর ৯টি ভিন্ন রূপ। এই ৯টি রূপের সগুন বর্তমান দেবী পার্বতীর দুর্গার রূপ। যে রূপে দেবী পার্বতী বধ করেন দুর্গম অসুরকে।
দেবী দুর্গার এই ৯টি রূপ হল যথাক্রমে শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ড, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী৷ প্রতি শরৎকালে নবরাত্রির ৯ দিনে প্রতিদিন দেবী পার্বতীর দুর্গা রূপের এই নয় রূপের এক একজনকে পুজো করা হয়৷
পূজার প্রথম দিন রোববার মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, ‘সারাদেশের হাজার হাজার পূজা মণ্ডপে কারিগররা যেখানে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সেখানে এই জায়গায় ঢাকের তালে মোহিত হচ্ছে পূজা মণ্ডপ। নিজের ও দেশের মঙ্গল কামনায় দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়েছেন ভক্তরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা আগাম দুর্গা পূজা দেখতে এসেছেন।’
পূজা দেখতে আসা রুপম আচার্য বলেন, ‘সাধারনত দুর্গাপূজা ষষ্টি তিথিতে শুরু হয়ে দশমীতে শেষ হয়। কিন্তু এই পূজা মন্দিরে একটু ব্যতিক্রম আয়োজন। এখানে কয়েকদিন আগেই পূজা শুরু হয়। এবং ৯দিন ব্যাপী পূজা হয়। একটু আগে ভাগেই পূজা শুরু হওয়ায় আমরা দেখতে আসছি। সারাদেশে এখনো পূজা শুরু হয়নি। এখানে দুর্গা পূজা শুরু হয়ে গেছে। আমরা পরিবারের লোকজন পূজা দেখতে চলে এসেছি। মায়ের কাছে প্রার্থনা করছি আমরা যেন সবাইকে নিয়ে ভালো থাকি।’
পরিবারের সাথে আসা দেবশ্রী দত্ত বীথি বলেন, ‘মামার সাথে পূজা দেখতে এসেছি। এখানে প্রথম বার এসেছি পূজা দেখতে। এখানে মা দুর্গার অনেকগুলো প্রতিমা রয়েছে। এরকম পূজা আগে দেখিনি। অনেক ভালো লাগছে।’
শ্রী শ্রী মঙ্গলচণ্ডী সেবাশ্রম নবরূপে নবদূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের কোষাধ্যক্ষ স্বাধীন চাষা বলেন, ‘শ্রী শ্রী মঙ্গলচণ্ডী সেবাশ্রম মন্দিরে নবদুর্গা পূজার ১৩ তমও আয়োজন। আমরা এখানে দুর্গা পূজা শুরু করার পর থেকেই প্রতিবছরই এখানে অনেক ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটে। শুধু শ্রীমঙ্গলই নয়, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ আসেন। কয়েকশো বছর পুরনো এই মন্দির, জাগ্রত একটি মন্দির। ভক্তরা মঙ্গলচণ্ডীর এই পরিবেশে আসলে মুগ্ধ হয়। শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপন করতে পারে।’
শ্রী শ্রী মঙ্গলচণ্ডী সেবাশ্রম নবরূপে নবদূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা ঝিনুক বৈদ্য বলেন, ‘শ্রী শ্রী মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরটি এই অঞ্চলের অনেক প্রাচীন মন্দির। এই জায়গাটিতে গত ১২ বছর ধরে আমরা নবদুর্গা পূজা করে আসছি। এবছর আমাদের ১৩ তম আয়োজন। এই নবদুর্গা পূজা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসেন। আগামী ২৪শে অক্টোবর সারাদেশের পূজার সাথে মিল রেখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি হবে।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার