স্পোর্টস রিপোর্টার:
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এক ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাকি দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে যেভাবে বাংলাদেশ হেরেছে, তা নিয়ে দেশের সব মহলেই সমালোচনা বইছে। ম্যাচ হারতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিপক্ষ দল যেভাবে ছেলে খেলা করেছে তার জন্য সব মহলই দায়ী করছেন পেছনের ঘটনা।
নানা ইস্যুতে বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন সবচেয়ে বেশি সমালোচিত বাংলাদেশ। দল গঠন থেকে শুরু করে কোচ নির্বাচন, সিলেকশন কমিটি, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সংশ্লিষ্টতা, সাকিব আল হাসানের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আলোর ঘর অন্ধকার করে দেওয়া নানা ঘটনায় পরিষ্কার, বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের কোনো পরিকল্পনাই ছিল কিনা।
ক্রিকেট বোদ্ধারা সরাসরি বলে দিচ্ছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। অন্য দেশগুলো বিশ্বকাপ নিয়ে যেভাবে একটা রোডম্যাপ করেছিল তা করতে পারেনি বিসিবি। কিসের অভাব ছিল বিসিবির। কথায় কথায় এই বিসিবি ৯ কোটি টাকার ফান্ডের কথা বলেছে। অর্থ ভাণ্ডার যদি উপচে পড়ে তাহলে কাজ করতে সমস্যা থাকার কথা না। দুই রুমের বোর্ড থেকে এখন ৫০ রুমের বোর্ড হয়েছে। টাকা এখন ক্রিকেট বোর্ডে গড়াগড়ি খায়।
সভাপতি থাকাকালীন সাবের হোসেন চৌধুরী প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট কত? ভবিষ্যতে এই বোর্ডের ফান্ডে এত পরিমাণ টাকা থাকবে তা মন্ত্রণালয়ের বাজেট ছাড়িয়ে যাবে, যে কেউ এসে বোর্ড চালাতে পারবে। কারো সমস্যাই হবে না।’ সাবের চৌধুরীর কথা সত্য হয়েছে। টাকায় সয়লাব বিসিবি। তাহলে কেন বিশ্বকাপ নিয়ে মজবুত পরিকল্পনা করতে পারেনি এখনকার বিসিবি। নির্বাচন এলে এই বোর্ডে ঢোকার জন্য লাইন পড়ে যায়। কী মধু আছে এখানে। অনেক পরীক্ষিত সংগঠক সততা নিয়ে কাজ করতে এলেও পাত্তা পায় না। কাকে দিয়ে কাজ হবে সেই বিচার বিশ্লেষণ না করেই সাজানো গোছানো নির্বাচনে ছিটকে পড়েন প্রকৃত সংগঠকরা। যারা বোর্ডে প্রবেশ করেন তারা তো কেউ টাকা এনে বোর্ড পরিচালনা করেন না। বিসিবির ব্যাংকে টাকা ভরা। খরচ করো। তাহলে বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় দুর্বলতা কেন।
একটা দেশ বিশ্বকাপে যাবে, বিশেষ করে সেটা যদি হয় ক্রিকেট বিশ্বকাপ। যাওয়ার আগেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে একাদশে কে কোথায় খেলবেন। আর এবার বিশ্বকাপে গিয়ে একাদশটা হয়েছে ঠিকানাবিহীন। প্রত্যেক খেলায় ব্যাটিং লাইন কেটে ছিড়ে নতুন করে সাজানো। আজ যাকে ওপেনে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে সেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান পরের ম্যাচে কোথায় খেলবেন তা কেউ জানেন না।
পরীক্ষিত ব্যাটার খেলছেন সাত-আটে। অথচ বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই টিভি সাক্ষাত্কারে (তামিম ইকবাল সম্পর্কে) বলেছিলেন তিনি জানতে পারবেন না দলে কে আছে, কে নেই। এভাবে তো পরিকল্পনা করা যায় না। বিসিবি সভাপতির কোন জিনিসটা অপছন্দ। যেটা না হলে ভালো হয়, এমন প্রশ্নে সংবাদমাধ্যমকে সাকিব জানিয়েছিলেন দলের ভেতরের কথা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা। এটা না হলেই ভালো।
সাকিবের কথা হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, তামিম ইকবাল ইস্যুর পর থেকে বিসিবি সভাপতি সংবাদমাধ্যম থেকে দূরেই রয়েছেন। কোনো কথাই বলেননি। সাংবাদিকদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন পুরস্কার তুলে দিতে। সেখানও তিনি কথা বলেননি। যে মানুষটি জুমার নামাজ শেষে বেরিয়ে দেখতেন অপেক্ষায় সংবাদমাধ্যম। সেখানেই তিনি কথা বলেছেন দল নিয়ে, নানা ইস্যুতে। সেই মানুষটি আচমকাই সংবাদমাধ্যম থেকে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন, নিঃশ্বব্দ কাজ করছেন। অথচ দেশের প্রত্যেক খেলায় হাজির ছিলেন পাপন। যেটা আগের কোনো (সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়া) কোনো সভাপতিকে দেখা যায়নি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিশ্বকাপে দেশের ক্রিকেট যখন বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়ে সমালোচিত হচ্ছে। অধিনায়ক সাকিব, কোচ হাথুরুসিংহে সমালোচিত হচ্ছেন, সিলেকশন কমিটি তীরবিদ্ধ হচ্ছে, এসব নানা বিষয় নিয়ে যখন ঝড় বইছে তখন নিশ্চুপ বিসিবি। প্রশ্ন উঠতেই পারে ৯০০ কোটি টাকার ফান্ড রেখে কী লাভ হলো।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার