স্পোর্টস ডেস্ক:
ক্রিকেট বিশ্বকাপ এমন এক জার্নি, যেভাবেই হোক পুরো পথ পরিক্রমণ করে আসা ছাড়া উপায় নেই। ভ্রমণ যতই কষ্টসাধ্য ও প্রতিকূল হোক না কেন, সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই হবে। অনেকটা রোলার কোস্টার নামক রোমাঞ্চকর রাইডে উঠার দুঃসাহস দেখানোর পর কোনো ভাবেই বলা যাবে না, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। হয় উপভোগ করতে হবে, নতুবা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশ দলের অবস্থা এখন কেমন, কে জানে? আফগানিস্তান দিয়ে যে আনন্দময় যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা যেন দিনে দিনে নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। অবশ্য শিরোপা-প্রত্যাশী ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড আর ভারতের মতো শক্তিমানদের বিরুদ্ধে সুখকর অনুভব আশা করা যায় না। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে অনেকটা পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো মাঝে-মধ্যে তার দেখা মিলতে পারে। কিন্তু হররোজ এমন হওয়ার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশ দল এখনো অর্জন করতে পারেনি। তবে টাইগাররা এতটা শক্তি ও সামর্থ্যহীন নয় যে, অসহায়ভাবে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে। প্রতিপক্ষের জয় পাওয়াটাকে কঠিন করে তোলার হিম্মত টাইগারদের অন্তত আছে। অথচ হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতে দলের খেলায় লড়াকু মানসিকতার প্রকাশ দেখা যায়নি। কৌশলের ক্ষেত্রে যেমন মুনশিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়নি, তেমনিভাবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি ব্যাট-বলের লড়াইটাও। সেটাই বেশি আক্ষেপের।
বাংলাদেশ দল যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। ছন্দটা কেন ফিরে পাচ্ছে না, সেটা কি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন নয়? এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা-ভাবনাও বুঝতে পারা যাচ্ছে না। দল ছন্দ হারালে তা ফিরিয়ে আনাই ম্যানেজমেন্টের দক্ষতার মাপকাঠি। দল যথাযথ পরিচালনা ও সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করার পাশাপাশি টিমওয়ার্ক, যোগাযোগ, লক্ষ্য নির্ধারণ ও কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি, দলের মধ্যে সমস্যা চিহ্নিত করা এবং দ্বন্দ্ব্ব সমাধান করার ক্ষমতাও ম্যানেজমেন্টের দক্ষতার পরিচায়ক। আধুনিক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে যোগ হয়েছে আরো নানা অনুষঙ্গ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। এ বিষয়গুলো তো সংশ্লিষ্টদের না জানার কথা নয়। কিন্তু তার প্রতিফলন তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া দল নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সমালোচনা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। এটা তো সাধারণ জ্ঞানেরই অংশ, আপনি কলাকৌশল ঠিক করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবেন। যুদ্ধের ময়দানে নেমে কৌশল ঠিক করতে চাইলে তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেকক্ষেত্রে হয়তো ফাটকা লেগে যায়। তবে তা দিয়ে সব সময় বাজিমাত করা যায় না। মৌলিক কৌশল অবলম্বন করার বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। দল সফল না হওয়া সত্ত্বেও টিম ম্যানেজমেন্ট ফাটকা খেলা থেকে বিরত থাকছে না। এটাও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্রিকেটাররা তাদের অভ্যস্ত পজিশন হারিয়ে চাপের মধ্যে আছেন। যে কারণে ব্যাট-বলের সঠিক মেলবন্ধন ঘটছে না। আসছে না কাঙ্খিত সাফল্য। তার খেসারত দিতে হচ্ছে দলকে। আর ব্যর্থতার কারণে মনোবল ভেঙে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা খুব সহজ নয়। মন নামক সূক্ষ অনুভূতি নাড়া খেলে ক্রিকেটের মতো মনস্তাত্ত্বিক খেলায় মনোনিবেশ করা যায় না। এ বিষয়টি কেন যেন পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। কাজ করছে এক ধরনের গোয়ার্তুমি। মনে করা হচ্ছে, যে ফাটকা খেলা হচ্ছে, তা এক সময় না এক সময় কাজে লাগবেই। কিন্তু ততদিনে যে দেউলিয়া হয়ে যেতে হতে পারে, সে বিবেচনা কি কাজ করছে না?
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার