সম্পাদকীয়:
নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হইতে এখনো বেশ কয়েক দিন দেরি। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের তথা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পূর্বেই একটি রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি গড়িয়া উঠে ভালো বা মন্দ হিসাবে। ইহা অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়; কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ লইয়া জানা গেছে, একশ্রেণির ব্যক্তি স্থানীয় নির্বাচনি এলাকায় হুমকি-ধমকি দিয়া বেড়াইতেছেন। তাহারা পুলিশ ও প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে অর্থ ব্যয় করিয়া নিজেদের অপকর্ম অব্যাহত রাখিতেছেন। প্রশাসন ও পুলিশের ঐ কিছু কর্মকর্তা তাহাদের ইচ্ছানুযায়ী উঠাবসা করিতেছেন। এই সকল ব্যক্তির কারণেই যে একটি সংঘাতময় পরিবেশের সৃষ্টি হইতে পারে তাহা লইয়া শুধু আমাদের নহে, দেশি এবং বিদেশি মহলেরও শঙ্কা রহিয়াছে। এই সকল ব্যক্তির জন্যই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হইয়াছে বলিয়া গ্রহণযোগ্যতা না-ও পাইতে পারে। নির্বাচন আনচ্যালেঞ্জড হইবে না—এইটাই বাস্তবতা; কিন্তু যাহারা নানা ধরনের অনিয়ম, অনাচারের আশ্রয় লইতেছেন, তাহারা ইহাকে আরো জটিল ও প্রশ্নবিদ্ধ করিয়া তুলিতে সহায়তা করিতেছেন। ইহারা মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়া হয়রানি করিবার অপচেষ্টা চালাইয়া আসিতেছেন। অভিযোগেরও একটি ন্যূনতম বা আংশিক সত্যতা থাকিতে হয়। ইহারা সেই সকল বিষয় তোয়াক্কা করিতেছেন না। অনেকটা হাওয়া হইতে পাওয়া অভিযোগ আনিয়া মানুষকে হয়রানি করিতেছেন। বলা হইতেছে, অমুকের ছবি ভাঙিয়াছে; কিন্তু বাস্তবে ইহা যে একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হইতে পারে, সেই কথা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ভাবিতেছে না। তাহাদের ভাবিবার অবকাশ নাই। কারণ তাহাদের অনেকেই অর্থের নিকট বিক্রয় হইয়া যাইতেছেন এবং ষড়যন্ত্রের অংশে পরিণত হইতেছেন। আরো লক্ষ করা যাইতেছে, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পূর্বে সাধারণ অনেক মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দেওয়া এবং হয়রানি করার প্রবণতা বাড়িয়াছে। আর এই অপতত্পরতায় প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা পূর্ণ সহযোগিতা দিয়া যাইতেছেন। শুধু তাহাই নহে, সরকারি দলের নাম করিয়া ইহারা নানা ধরনের গুজব, মিথ্যা প্রচারণা চালাইতেছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমেও। তাহাদের ছড়াইতে চেষ্টা করা অসত্য প্রচারণা ও গুজবের বিষয়ে সরকারি দলকে সহায়তা না করিয়া বরং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করিতেছেন। প্রকৃতপক্ষে দলের ভালোমন্দে ইহাদের কিছু যায়-আসে না, ইহারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করিতে যেইভাবে খুশি সেইভাবে দলের নাম ব্যবহার করিয়া চলিয়াছেন।
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করিতে হইলে এখনই এই অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। তাহা না হইলে আস্থার সংকট কাটিবে না এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করিয়া তোলা যাইবে না। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর কী পরিবেশ তৈরি হইবে, অবস্থা কোনদিকে গড়াইবে, তাহা আগাম কেহই বলিতে পারে না; কিন্তু ভুয়া অভিযোগ প্রদান, সেই অভিযোগ গ্রহণ করা বন্ধ করিতে হইবে। প্রশাসনের যেই সকল কর্মকর্তা স্থানীয় বিতর্কিত এবং অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদের সহিত সহযোগিতা করিয়া আসিতেছেন, তাহাদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহা হইলেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার একটি অন্যতম ধাপ আগাইয়া যাওয়া সম্ভব হইবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার