সালেহা সুলতানা:
মানুষ প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নয়। চারপাশের প্রকৃতি, পরিবেশ, ভূ-রাজনৈতিক আবহের বলয়কে অবলম্বন করেই গড়ে ওঠে মানুষের প্রকৃত সত্তা। মানুষ নিজেকে জানে, সত্যকে চেনে এবং একসময় বিরূপতা অপনয়নে মুক্তির প্রত্যয়ে নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত হয়। এ সংগ্রাম ব্যক্তি থেকে সামষ্টিক বৃত্তে আবর্তিত হয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়।
মনিরুজ্জামান বাদল একজন সত্যানুসন্ধানী মুক্তিকামী সৃজন-প্রতিভূ। তাঁর মানস গঠনে নিহিত বঙ্গবন্ধুর মুক্তিকামী চেতনার বীজমন্ত্র, সেসঙ্গে এদেশের মানুষ ও প্রকৃতির সারল্য। মনিরুজ্জামান বাদলের ‘মুক্তির সংগ্রাম নিরন্তর’ গ্রন্থে মোট চল্লিশটি অণু-নিবন্ধ গ্রন্থিবদ্ধ হয়েছে। এসব নিবন্ধে মনিরুজ্জামান গভীর দর্শনবোধে নিমগ্ন থেকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রয়াসী হয়েছেন—একই পৃথিবীর জল-হাওয়ায় বর্ধিত মানুষ কেন অযাচিত অন্য সকল ইকোসিস্টেমে? অথবা মনের গভীরে যে চেতনার বাস তাকে পৃথিবীর কোনো উপাদানেই খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? প্রাগৈতিহাসিক থেকে আজকের উত্তরাধুনিক সময় পর্যন্ত চলার পথে গরমিল অনুভবে সক্ষম হলেও মানুষ তার কক্ষপথ নিয়ন্ত্রণ করতে অপারগ কারণ লেখক মনে করেন ‘বহুক্ষেত্রে আমি অসহায়’। এই অসহায়ত্বের দেয়াল ভেঙে মানুষ গড়ে তুলতে চায় মিলনের স্বচ্ছ নীল সৌন্দর্য।
মানুষ তার যাপিত জীবনের সকল বিষয়ে মুক্তির স্বাদ আস্বাদনে প্রয়াসী। মানুষের শান্তি ও মুক্তির পথ সেই তিমিরেই নিমজ্জিত হলো। লেখক এ চরম সত্যকে ব্যাখ্যা করে যথোপযুক্ত কারণ নির্ণয়ে সচেষ্ট হয়েছেন ‘বিশ্ব ব্যবস্থায় সংকট ও মুক্তি’ শিরোনামের রচনায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ একটি শপথ; যার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন এ দেশবাসী। লেখকের ভাষ্য এতদপ্রসঙ্গে স্মরণীয়: ‘একাত্তরের মহাকাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরেই শক্ত কাঠামোয় দাঁড়িয়েছে মুক্তির চেতনা। এ চেতনার চারটি মৌল উপাদান হচ্ছে— অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, সাম্য এবং অর্থনৈতিক উন্নতি’। বৈদগ্ধ্যময় ও স্বাপ্নিক লেখক মনিরুজ্জামান বাদলের ‘মুক্তির সংগ্রাম নিরন্তর’ গ্রন্থটি চিন্তাশীল পাঠককে ভাবাবে নতুন চিন্তায় উদ্ভাসিত করবে।
মুক্তির সংগ্রাম নিরন্তর
মনিরুজ্জামান বাদল
প্রকাশক: অয়ন প্রকাশন
প্রচ্ছদ: অচিনপাখি
প্রকাশকাল: ২০২৩
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার