স্টাফ রিপোর্টার:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম এ আদেশ দেন।
এদিন হাসান সারওয়ার্দীকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন মীর।
অপরদিকে তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুনানিতে এহসানুক হক সমাজী বলেন, তিনি একজন সিনিয়র সিটিজেন, তিনি এই মামলায় পরিস্থিতির শিকার। তিনি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত না। তার পক্ষে তিনটি আবেদন দিয়েছি। একটি জামিনের একটি ডিভিশনের এবং একটি চিকিৎসার জন্য। যেই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা জামিনযোগ্য। আইনে তাই বলা আছে। তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ নেই, কোনো প্রমাণ নেই। তার জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হাজির হবেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে জামিন দেবেন। এটা তার অধিকার।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর সাভার থেকে হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ১ নভেম্বর তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২৯ অক্টোবর মহিউদ্দিন শিকদার নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা করেন। মামলায় মিয়ান আরেফিসহ হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতারের পর গত ৩০ অক্টোবর মিয়ান আরেফিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সারা দেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা কাকরাই মোড় থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত পুলিশেরর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনা ও সরকারি গাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত ও এক সদস্য নিহত হন। একপর্যায়ে বেলা ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন।
এজাহারে বলা হয়, বিএনপির ওই কর্মকাণ্ডের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে আসামি মিয়ান আরেফি, হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতাকর্মীসহ কিছু সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতে আসামি মিয়ান আরেফি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় প্রদান করেন। বাংলাদেশ পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে আসামি মিয়ান আরেফি তার বক্তব্যে দাবি করেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এই আসামি আরও দাবি করেন যে, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, হাসান সারওয়ার্দী এবং ইশরাক হোসেন তাকে (মিয়ান আরেফি) মিথ্যা বক্তব্য দিতে সহযোগিতা করেন এবং তার বক্তব্য সমর্থন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উসকানি দেন। মিয়ান আরেফি অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় সরকারের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার