স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পুলিশ সদস্যদের বহন করা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা, ২৯ অক্টোবর । সাংবিধানিকভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে পহেলা নভেম্বর থেকে। এর আগে থেকেই রাজনৈতিক ময়দানে বিরাজ করছে উত্তেজনা। দুই মেরুতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থানে প্রতিনিয়ত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের দিন-তারিখ যত এগিয়ে আসবে সহিংসতা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে আতঙ্কের মধ্যে আছে স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
গত দুই সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা অবরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা না করায় এবং অনেক প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষার সময় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়ে অনেক বাবা-মা তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১৬০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শুধু ঢাকাতেই ঘটেছে ৮৬টি।
এসব সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে বাস চালকের সহকারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেক কয়েকজন। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের সার্জারী অ্যান্ড বার্ন ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন।
এছাড়া গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষ ও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশের এক সদস্য ও পথচারীসহ প্রায় এক ডজন মানুষ।
গত দুই দিনে ঢাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তারা তাদের সন্তানদের বাসে চলাচল করতে দিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কেউ রিকশায়, কেউ স্কুলগামী ভ্যানে কেউ কেউ পাঁয়ে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করছে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজান জানায়, বাসা থেকে বাসে চলাচল করতে মানা করা হয়েছে। অন্যদিকে ৫০ টাকার রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। বাসে যাতায়াত করতে তার খরচ হতো ১০ টাকা।
একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তালহা অবরোধের দিনগুলোতে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করছে। তার ভাষ্য, “বাসেই যাওয়া-আসা করতাম। ভাড়াও কম ছিল। কিন্তু বাসে যেকোনো সময় আগুন দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টিভিতে, পত্রিকায় প্রতিদিন সেই সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। তাই বাসা থেকে বাসে চলাচলে নিষেধ করেছে। রিকশা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে হেঁটেই যাতায়াত করছি।”
কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ব্যবসায়ী সুমিত হাওলাদার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সামনে মেয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু লাগাতার অবরোধে সব জায়গাতেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। আগুন দেওয়া ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় ছেলেমেয়েরা স্কুলে একা আসতে ভয় পাচ্ছে। তাই দিয়ে সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যাই; ছুটি হলে নিয়ে যাই। একা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছিন না।”
এদিকে অবরোধের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে ধানমন্ডি হলি ফ্লাওয়ার স্কুলে। ফলে বাধ্যতামূলক স্কুল করতে হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মানহাকে। মানহা জানায়, অবরোধ চলাকালে একদিন তার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হইছিল। ভয়ে সেদিন স্কুলে আসেনি। এখন পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।
মানহার বাবা মামুন মৃধা বলেন, “আমি ও মানহার মা দুজনেই চাকরিজীবী। মানহা স্কুলভ্যানে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু অবরোধে কখন কি হয় তাই কষ্ট হলেও নিজেই দিয়ে আসি আবার ছুটি হলে নিয়ে আসি।”
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার