স্টাফ রিপোর্টার:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির চাহিদা অনুযায়ী দেশের ৩০০ নির্বাচনী আসনে দুই হাজার ৭০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন হবে। যা গত সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ৫ গুণ বেশি।
আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৩৭ দিনে এতো সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য ৯০ কোটির বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করতে চায় ইসি। এজন্য গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইসির চিঠিতে তিনটি ইউনিয়নের জন্য একজন (দুর্গম ও দূরবর্তী ২টি ইউনিয়নে একজন), বড় পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতিটিতে চারজন, প্রতি পৌরসভায় তিনজন করে এবং সিটি করপোরেশনের প্রতি ৪-৫টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসির সূত্র আরো জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
দেশে ইউনিয়নের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। এ ছাড়া, ৩২৮টি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন ১২টি। গত নির্বাচনে প্রতি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ইসির চাহিদা অনুযায়ী, সেখানে এবার প্রত্যেক উপজেলায় পাঁচজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
অবশ্য এতো সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একসঙ্গে নিয়োগ করা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সাধারণ সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারাই মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জনপ্রশাসনে এক হাজার ১৬৩ জন সহকারী সচিব ও এক হাজার ৯৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আছেন। এ দুই পদে মোট কর্মকর্তার সংখ্যা ৩ হাজার ১৩০ জন। তাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪৯৫ জন ইতোমধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
এ সংখ্যা বাদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা থাকে ২ হাজার ৬৩৫ জন। তাদের মধ্যে একটি অংশ সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, কেউ কেউ ছুটি দিয়ে বিদেশে কর্মরত এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে প্রেষণে নিযুক্ত আছেন। এসব বাদ দিয়ে দায়িত্ব পালনের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২ হাজারের বেশি নয়। অবশ্য সরকার চাইলে উপসচিব বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ১ হাজার ৬৫৮ জন উপসচিব, ৯৩৩ যুগ্মসচিব, ৩৭১ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ২৭ জন গ্রেড-১ ও ৮২ জন সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা আছেন।
সম্ভাব্য খরচ
এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পেছনে দৈনিক ভাতা, যানবাহনের জ্বালানিসহ প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ইসি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী এলাকায় ৩৭ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসাবে ২ হাজার ৭০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করলে নির্বাচন কমিশনের ৯০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শাহীন আরা বেগম গতকাল সোমবার বলেন, নির্বাচন কমিশনের চিঠি এখনো তিনি দেখেননি। চিঠি দেখে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার সক্ষমতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার