স্টাফ রিপোর্টার:
সীসা দূষণ দিন দিন মহামারি আকার ধারণ করছে। ক্ষতিকর এই সীসা দূষণের শিকার হচ্ছেন নারী, শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। সম্প্রতি ইউনিসেফ ও সিভিল সার্জন এর মাধ্যমে সিলেটসহ সারা দেশের ৯৮০জন শিশুর মধ্যে গবেষণা চালানো হয়।
সীসা দূষণ ও সচেতনতা শীর্ষক কর্মশালা নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্সের হলরুমে সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফ সিলেটের চীফ ফিল্ড অফিসার কাজী দিল আফরোজা ইসলাম।
মেডিকেল অফিসার-সিভিল সার্জন অফিস, ডা. স্বপ্নীল সৌরভ রায় এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ডা. স্নিগ্ধা তালুকদার ও ডা তনুশ্রী তালুকদার।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.জন্মেজয় দত্ত, ইউনিসেফ সিলেট ফিল্ড অফিসের স্বাস্থ্য অফিসার ডা. মির্জা ফজলে এলাহী।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী সীসা দূষণের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে খুলনা ও টাঙ্গাইল জেলা।
এদিকে সিলেট শহরতলীর খাদিমনগর, রুস্তমপুর ২৪৮ জন শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে শতকরা ৮৪ ভাগ শিশু ক্ষতিকর এই সীসা দূষণের শিকার। তবে সিলেট ও পটুয়াখালী অঞ্চলে ঝুঁকি কম।
কর্মশালায় গবেষণার আলোকে তৈরি প্রবন্ধে বলা হয়, সিলেটে ব্যাটারী তৈরীর কারখানা বা অন্যান্য শিল্প কারখানা কম থাকা সত্ত্বেও সীসার গড়মাত্রা পাওয়া যায় ৮.৩ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার এবং প্রায় ৮৪ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই রক্তে সীসার মাত্রা ছিল সিডিসি কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার ৩.৫ এর চেয়ে বেশী।
ছয় বছরের কম বয়সি শিশুরা বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে ল্যাব প্রিন্ট বা বাড়ীঘর, ব্রিজে প্রিন্টের রঙ থেকে সীসা দূষণের ঝুঁকি থাকে।
সব বয়সের মানুষই সীসা দূষণের শিকার হয়ে থাকেন বিশেষ করে শিশু এবং নারীরা ক্ষতিকারক সীসা দূষণের শিকার হন।
মায়ের গর্ভে থাকা শিশুও এই সীসা দূষণের শিকার হয়ে থাকে। এমনকি বাচ্চার মেধা বিকাশেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষতিকারক এই সীসা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় বিশ্বে প্রতি তিন জন শিশুর একজন সীসা দুষণের শিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৬০ শতাংশ এবং প্রায় তিন কোটি ষাট লক্ষ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা ৫(ug/dl) মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার এর বেশি। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ আক্রান্ত দেশ।
ইউনিসেফ এর সহায়তায় আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে ২০২২ সালে সিলেটের ২৪৮ জন সহ টাঙ্গাইল, খুলনা ও পটুয়াখালীর সর্বমোট ৯৮৩ জন বাচ্চার রক্তে সীসার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষায় প্রত্যেকের নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায় যেখানে গড় মাত্রা ছিল ৫ ৬৩ (µg/dl) মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা WHO ও আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার চেয়েও বেশি।
কর্মশালায় এর থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই উল্লেখ করে প্রতিরোধই একমাত্র উপায় যা এর ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার