ছাতক প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক- দোয়ারাবাজার) আসনকে জেলা রাজনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে। জাতীয় নির্বাচনে টানটান উত্তেজনা ছড়ানো এই আসনটিতে এবার কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই সংসদীয় আসনে ৭ জন নৌকা প্রত্যাশী নেতারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি), রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি, ৩ জন প্রবাসী, ২ জন স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত ৭ নেতা। তাই এখন গ্রামের চায়ের দোকান থেকে হাট-বাজার কিংবা খেলার মাঠে নানা প্রশ্ন উঠছে। আবার কেউ কেউ ভাবছেন আসনে প্রার্থী বদল না কি পুরোনোতে আস্থা রাখছে দল?
মনোনয়নপত্র জমাদানের পর থেকে রাজনৈতিক মাঠে আলোচনা যেমন আছে, তেমনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে রয়েছে সমালোচনাও। তাদের সমর্থকদের একটি অংশ মনে করেন, বয়োজ্যেষ্ঠ ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসেবে ৫ম বারের মতো বর্তমান এমপি মহিবুর রহমান মানিকের হাতেই উঠতে যাচ্ছে নৌকার হাল। সরকারের বিগত সময়ের উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতেই এ আসনে মানিকের বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।
এর পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি শামিম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকরা বলছেন, ‘এবার মানিককে সড়ানোর সম্ভাবনা খুবই বেশী। নৌকা পাবার দৌড়ে এগিয়ে আছেন শামিম চৌধুরী।’
ছাতক-দোয়ারায় আলোচনায় রয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি (ছাতকের উ:খুরমা ইউনিয়নের আমেরতল গ্রামের বাসিন্দা) মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ীর বাসিন্দা) শামিম আহমদ চৌধুরী এই দুজনের মধ্যেই যেকোন একজন নৌকা পাচ্ছেন।
অপরদিকে, ওই দুজন ছাড়া আরও ৫জন আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। যদিও মাঠ পর্যায়ে মনোনয়ন ক্রয়করা অন্য নেতাদের নাম বেশ একটা শুনা যায়না তবুও তারা রাজনীতিতে নানা ভাবে সক্রিয় রয়েছেন। এরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি (ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ নতুন বাজার) সৈয়দ মো. আখতার আহমদ, ছাতক উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক (ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা) আব্দুস সহিদ মুহিত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সদস্য ও সিলেট ল’কলেজের সাবেক জিএস (ছাতকের দ:খুরমা মণিজ্ঞাতি গ্রামের বাসিন্দা) আনিসুজ্জামান আজাদ, যুক্তরাজ্য রাধারহাম আওয়ামীলীগের সভাপতি ও যুক্তরাজ্য শেফিড শ্রমিকলীগের সভাপতি (ছাতকের দোলারবাজার পালপুর গ্রামের বাসিন্দা) টি এম শাহাব উদ্দিন ও যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বর্তমান লন্ডন আওয়ামীলীগ নেতা (ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ সুহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা) মতিউর রহমান নানু।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনে টানা চার মেয়াদের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক (বর্তমান এমপি) মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি শামীম আহমদ চৌধুরী স্থানীয় রাজনীতিতে ছাতকের বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী’র আপন ছোট ভা্ই। একইসঙ্গে শামীম চৌধুরীর ভালো সমর্থক ও অনুসারি রয়েছে বলে জানা যায়। সাংগঠনিক কার্যক্রম সরাসরি মাঠে এমপি মানিকের প্রতিপক্ষ হিসেবে জানান দিয়ে থাকা শামীম চৌধুরী দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
এদিকে, ছাতক-দোয়ারাবাজারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনকে সুসংগঠিত ও গতিশীল করতে প্রার্থী পরিবর্তনের আওয়াজ তুলছেন দলের বড় একটি অংশ। দলের অন্তর্কোন্দল আর গ্রুপিং থেকে পরিত্রাণ দিতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিবদমান পক্ষের সমর্থকরা। দলের আভ্যন্তরীন এ বিভাজন দূর করতে নেতৃত্বের পরিবর্তন চান তারা। নৌকার মাঝি হিসেবে তরুণ উদ্যমী প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীকে দেখতে চান অনুসারিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
মনোনয় প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক জানান, বর্তমান সময়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পউন্নয়ন, বিদ্যুৎতায়ন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নে ছোঁয়া লেগেছে। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তাঁর আরেক মেয়াদের দায়িত্বে থাকা দরকার বলে জানান তিনি। তার উপর দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা রয়েছে। আবারও নৌকার হাল ধরতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি।
তবে বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রতি ‘মানুষের কোনো আস্তা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক নেতা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ছাতক দোয়ারায় দৃশ্যমান বিশেষ কোন উন্নয়ন নেই। তার আমলে দলে গ্রুপিং কোন্দল বেড়েছে। জামায়াত বিএনপি নিয়ে বাণিজ্য করেন ও আওয়ামীলীগের নেতাদের হত্যা করেন। তাছাড়া সরকার উন্নয়ন করছে কিন্তু দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে পরিবর্তন অত্যান্ত প্রয়োজন। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।
নৌকা মনোয়ন প্রত্যাশী সৈয়দ মো. আখতার আহমদ, আব্দুস সহিদ মুহিত, আনিসুজ্জামান আজাদ, টিএম শাহাব উদ্দিন, মতিউর রহমান নানু জানান, দলের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচাই বাচাঁই করে যে সিদ্ধান্ত দিবেন তাতেই অনড় থাকবেন।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮১ জন; ১টি পৌরসভা, ২টি উপজেলা এবং ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসন। এই আসনে বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫বার, জাতীয় পার্টি দুইবার, স্বতন্ত্র থেকে দুইবার, বিএনপি ও জাসদ একবার করে বিজয়ী হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার