স্পোর্টস ডেস্ক:
‘সাকিব আমাদের সেরা খেলোয়াড়। সেই সঙ্গে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন। তবে স্পিনার হিসেবে যে-ই খেলুক না কেন, তাকে খুবই সঠিক এবং অত্যন্ত দায়িত্বশীল হতে হবে। তাইজুল কয়েক বছর ধরে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাইজুলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ থেকে নিজের বিদায় বেলায় ক্রিকেটভিত্তিক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে টাইগার স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ তার প্রিয় শীর্ষ তাইজুল ইসলামকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন।
বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্ট চলকালীন (৩০ নভেম্বর) শেষ হয় লঙ্কান এই স্পিন কোচের বাংলাদেশ অধ্যায়। আর এই ম্যাচেই প্রথম বারের মতো ঘরের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের সাধ পায় শান্ত-মিরাজ-তাইজুলরা। আর পুরো ম্যাচেই ছিল স্পিনারদের দাপট। এতে করে বাংলাদেশে ক্রিকেটের সঙ্গে নিজের শেষ ম্যাচে শীর্ষদের কল্যাণে জয়ের মধুর স্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশ অধ্যায় শেষ করেন হেরাথ।
সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া এ সাক্ষাত্কারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে কাটানো আড়াই বছরের অভিজ্ঞতা জানান হেরাথ। প্রথমে বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে হেরাথ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সঙ্গে আড়াই বছর কাজ করেছি এবং আমি অনেক উপভোগ করেছি। কোচ হিসেবেও কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু উদ্যাপন করার মতোও অনেক কিছু ছিল। তাই আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। খেলোয়াড় ও দলের পরিবেশ নিয়ে আমি অনেক উপভোগ করেছি।’
বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে এই স্পিন কোচ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কন্ডিশনে এবং বিভিন্ন ভেন্যুতে খেলেছি এবং সেগুলোই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আপনি কীভাবে সেই পরিস্থিতি ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবেন এবং কীভাবে আপনি আপনার কৌশল ও মানসিকভাবে নিজেকে মানিয়ে নেবেন, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
হেরাথ বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পালনকালীন বিভিন্ন সময়েই দলে পেতেন না দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। হয়তো তিনি থাকতেন ইনজুরিতে অথবা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে দলের বাইরে। সেই সময় তাকে ছাড়াই কীভাবে অন্য স্পিনারদের নিয়ে নিজেদের আক্রমণ চিন্তা করতেন, কোচের কাছে জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি যেমনটা বলেছেন, সাকিব আমাদের সেরা খেলোয়াড় এবং বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন। শুধু সাকিব নয়, স্পিনার হিসেবে যে-ই খেলুক না কেন, তাকে খুবই সঠিক এবং অত্যন্ত দায়িত্বশীল হতে হবে। তাইজুল কয়েক বছর ধরে ভালো করছে। সাকিব থাক বা না থাক, বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাইজুলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
সেই সঙ্গে তরুণ স্পিনার নাঈম হাসানের প্রশংসা করে কোচ বলেন, ‘নাঈম দুই বছর খেলেছে। আমি মনে করি সে খুব ভালো বোলিং করেছে এবং প্রতিপক্ষের শিবিরে চাপ তৈরি করতে পেরেছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জন্য নাঈম একটি ভালো সম্ভাবনা।’
এদিকে লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেললেও এখন পর্যন্ত দলে কোনো ভালো মানের লেগ স্পিনারকে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় খেলতে গিয়ে টাইগারদের ভুগতে হয় এই লেগিদের মুখোমুখি হলেই। কারণ নেটে এ ধরনের বোলিংয়ে প্র্যাকটিস করা হয় না তাদের।
এ প্রসঙ্গে হেরাথ বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে হবে। এটা একজন রিস্ট স্পিনার বা ফিঙ্গার স্পিনার হতে পারে। আপনি যদি সুযোগ না দেন, তারা কীভাবে উন্নতি করবে?’ সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি একজন সঠিক চায়নাম্যান বা লেগ স্পিনার তৈরি করতে চান, তবে আপনাকে তাদের উপযুক্ত সুযোগ দিতে হবে। কারণ আপনি যদি তাদের তাড়াহুড়ো করেন এবং ফল আশা করেন, তাহলে আপনি কোনো ভালো ফল পাবেন না।’
চুক্তি শেষ হলেও হেরাথকে ফের দলের দায়িত্বে আনতে ইতিমধ্যে নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছে বিসিবি। তবে এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার করে কিছু জানাননি তিনি। যদিও গুঞ্জন আছে, বিসিবি হেরাথের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহ দেখালে এই বেতনে বিসিবির সঙ্গে নতুন চুক্তিপত্রে সই করবেন না এই লঙ্কান কোচ। তাকে ফেরাতে হলে বাড়াতে হবে বেতন। আপাতত তিনি এখন দুই মাস পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পরে নতুন চুক্তি নিয়ে ভাববেন।
এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে সামনের পথ নিয়ে আমি এখনো বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি অস্ট্রেলিয়ায় (পরিবারের কাছে) যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে ভালো আলোচনা হবে। আমার দিক থেকে আমি এই ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে থাকছি না। সুতরাং আমি যদি ফিরে আসি, তবে এটি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে হবে।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার