স্টাফ রিপোর্টার:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নেমেছেন সিলেটের বেশকয়েকজন প্রার্থী। সিলেটের প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ছাড়াও রয়েছেন-জপা-তৃণমূল বিএনপি-ইসলামী ঐক্যজোট-ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী।
সিলেট-২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর আসনে হতে পারে ভাগাভাগি। কে পাবেন, কে পাবেন না- তা নিয়ে চলছে বিস্তর বিশ্লেষণ। চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা।
এ আলোচনায় সবার আগে চলে আসে সিলেট-৬ আসন। আসনটি থেকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন হেভিয়েট দুই প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরী।
দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন নাহিদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বর্তমান এ সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপির পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শমসের মবিন চৌধুরীও এ আসনের প্রার্থী ছিলেন। দলবদল করে ২০১৮ সালে হন বিকল্প ধারার মনোনীত প্রার্থী। সেবার কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন। তবে পরে নাহিদকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান। ফলে সহজেই বিএনপি প্রার্থী ফয়সাল আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে ভোটে বিজয়ী হন নাহিদ।
শমসের মবিন এবার নিজেই একটি দলের চেয়ারপারসন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এ আসনটি তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদি তা-ই হয়, কপাল পুড়তে পারে নাহিদের।
দলীয় সূত্র ও বিভিন্ন পর্যালোচনা বলছে, নির্বাচনী ৩০০ আসনের মধ্যে বেশ কিছু আসন ভোটে আসা শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ভাগবাটোয়ারার এ ক্ষণে নাহিদের মতো কপাল পুড়তে পারে আওয়ামী লীগের মনোনীত আরও কয়েকজন প্রার্থীর।
একটি সূত্রে জানা গেছে, শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন ভাগবাটোয়ারার তালিকায় রয়েছে সিলেট-৬ ছাড়াও রয়েছে সিলেট-২, সিলেট-৩ ও সিলেট-৫। এসব আসন থেকে দলের নির্দেশে নৌকার প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
তবে, এ আসনে বাধা হয়ে থাকতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন শমসের।
তাছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনও এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ভাগাভাগির সিলসিলায় সিলেট-২ আসনও জাতীয় পার্টির কাছে ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। মহাজোটের ব্যানারে সেবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আসনটি জাতীয় পার্টির হাওলায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেবার হেরে যান জাপার প্রার্থী। নির্বাচিত হন বিএনপির নেতৃত্বে ভোটে আসা ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান।
এবারও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন তিনি। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জটিলতায়। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করবেন মোকাব্বির। এ তথ্য তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
দুই মেয়াদে নির্বাচনের পরে সিলেট-২ আসনে ফের নৌকার প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির জাঁদরেল নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে এ আসনে হারিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। দলের আনুগত্য থেকে বিগত দুই মেয়াদ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক। তাকে এ আসনে বহাল রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার সিলেট-২ বগলদাবা করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বহাল রাখলে লাঙ্গল কাটা পড়তে পারে তার।
সিলেট-২ নিয়ে বনাবনি না হলে আওয়ামী লীগের কাছে সিলেট-৩ চাইতে পারে জাতীয় পার্টি। ১৯৯১ সালে নৌকা ছেড়ে আসা আতিকুর রহমান আতিকের জন্য আসনটি চাওয়া হতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলাকালীন এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের জুনে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন হয়। জাপার আতিকুর রহমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য ফেরত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। গত আড়াই বছর ধরে তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। গুঞ্জন ছিল এবার আসনটি থেকে নৌকা সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছে।
আতিকের জন্য সিলেট-৩ চাওয়া হবে আওয়ামী লীগের কাছে। ক্ষমতাসীনরা রাজি হলে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরতে হতে পারে হাবিবকে।
এ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল। আওয়ামী লীগের এ নেতার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সেটি ফিরে পেতে তিনি আজ নির্বাচনে আপিল করেছেন তিনি।
দরকষাকষিতে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে সিলেট-৫ আসনটিও। জানা গেছে, মহাজোটের সমর্থনে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীকে সিলেট-৫ ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। যদি তা-ই হয় দ্বিতীয় বারের মতো সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে ফের ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে হতে পারে।
২০১৪ সালে মাসুক উদ্দিন আহমদকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে সেটি প্রত্যাহার করে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনকে এ আসনে প্রার্থী করা হয়। তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে মনোনয়ন দেয়। বর্তমানে তিনি সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য। বার্ধক্য বাধায় এবার প্রার্থী হননি হাফিজ আহমদ মজুমদার।
জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে শাব্বির আহমদকে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাগাভাগিতে হুছামুদ্দীনের জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ গুঞ্জনটি আরো জোরদার করেছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার