Daily Jalalabadi

  সিলেট     শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে ধ্বংশ করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করতে হবে।”

admin

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৫:১১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৫:১১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
“কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে ধ্বংশ করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করতে হবে।”

এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
“শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।” মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমনি সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না, ঠিক শিক্ষাবিহীন কোন জাতি সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না। শিক্ষা আবার দুই প্রকার। সু-শিক্ষা এবং কু-শিক্ষা। সু-শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে পন্ডিত ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। যেমন: ড: কুদরত-ই খোদা শিক্ষা কমিশন। এ কমিশন বাস্তবতার আলোকে দেশীয় জনশক্তির প্রস্তুতির আলোকে পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তরভ‚ক্ত করা হত। নিয়োগ করা হত অভিজ্ঞ শিক্ষক। তাদের দ্বারা সমাজে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সু-শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হত। দুরহত কু-শিক্ষা। বিশ কোটি লোকের বসবাস ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের মধ্যে।

 

যাহা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা আমেরিকা যুক্তরাষ্টের ভৌগলিক আয়তন ও জনসংখ্যা দিক দিয়ে বিচার করলে অত্যন্ত অপ্রতুল। এমন উন্নত দেশে, আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য অত্যন্ত সুদক্ষ লজিস্টিক সাপোর্ট আছে। তাদের তুলনায় আমাদের দেশে এ সাপোর্ট অনেকাংশে শুন্যের কোটায়। কিন্তু ২০ কোটি জনগন তাদের পূর্বপুরুষ ও ধর্মীয় রীতি নীতি বা মানবিক মূল্যবোধ বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা পন্ডিত ব্যক্তিদের জীবনী ছোট বয়সে মক্তবে বা পাঠশালায় পাট করানো হত। তাদের জীবন আদর্শ অনুসরন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হত।

 

এসব শিক্ষকরা সমাজে সর্বোচ্ছ সম্মানীত ব্যক্তি ছিলেন। তাদের ছাত্ররা রাস্তাঘাটে কোথাও দেখা হলে কদমবুচি সহ শ্রদ্ধা সুলভ আচরণের মাধ্যমে শিক্ষককে সম্মানীত করিত। আর শিক্ষক মহোদয়ের গর্ভ ছিল, সে তো আমার ছাত্র। কিন্তু হালের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক শুন্যের কোটায়। বাদশা আলমগীর শিক্ষককে সম্মান দিয়েছেন সর্বোচ্ছ। শিক্ষক নিজেকে ধন্য মনেকরে বলেছিলেন, “আজ হতে চীর-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শীর, নিশ্চয়ই তুমি মহান উদার বাদশা আলমগীর।” “আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কাল, অন্ধকার বলে ভাই তাই তুমি আলো” আলোকিত শিক্ষকদের দ্বারা এ কথার ভাবার্থ বুঝাতে হবে।

পূর্বের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর ফারাক। পূর্বের শিক্ষকরা ছিলেন তাত্তি¡ক। তত্ত¡ ও উপাত্ত¡ দিয়ে বিভিন্ন মনিষীদের জীবনীকে বাস্তবতার আলোকে শিক্ষার্থীদের বুঝাতেন। যেমেন’: প্লেটোর শিক্ষা নীতি ছিল তিন স্তরের। * যাহারা মেধাবী ও জ্ঞানী তাদের কর্মক্ষেত্র ছিল শিক্ষাকে শিক্ষাবান্ধব শিক্ষার্থী দিয়ে মেধাকে বাস্তবে রূপদান করা। * যাহারা সাহসী। পড়াশুনায় দুর্বল। তাদেরকে সমাজের শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সৈনিক হিসাবে গড়ে তোলা। * আর যাহারা সাহস এবং শিক্ষা গ্রহনে অনাগ্রহী তাদেরকে দিয়ে আধুনিক সমাজের খাদ্য ব্যবস্থা উৎপাদনের জন্য সময়োপযোগী শিক্ষা দেওয়া। এ ব্যবস্থা বাস্তব তত্ত¡ ও উপাত্ত দিয়ে শিকড়কে মজবুত ভিত্তির উপর দাড় করানো। যা কখন মানুষের মগজ থেকে দুর হওয়ার নহে।

উদাহরন হিসাবে মুসলমানগন যে ধর্ম পালন করে থাকেন তা কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর মাধ্যমে অহি নাযিল হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করনের মাধ্যমে। ১১৪ টি সুরার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের বুনিয়াদি গ্রন্থ আল-কোরআন রচিত হইয়াছে। এ. গ্রন্থ মুখস্থ করার জন্য “লক্ষ লক্ষ” হাফিজ-তৈরীর তাগিদ দেওয়া হইয়াছে। ধর্মগ্রন্থ হয়ত কোন কারনে পাওয়া না গেলে ও হাফিজগন যতদিন বেঁচে থাকবেন তা বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যা পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম তাদের ধর্মগ্রন্থ মুখস্থ করার রেওয়াজ নেই। “গুগল” নির্ভর সমাজ। হঠাৎ সাইবার আক্রমনে প্রযুক্তি সব ওলট পালট হয়ে গেল। কৃত্রিম সংকট তৈরী হল। সব অর্জন হারিয়ে গেল। প্রযুক্তি ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। সময়ের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যাইতেই পারে। কিন্তু বস্তুনিষ্ট ও তাত্তি¡ক বিষয় মুখ্যস্থ করা আর বেশী জরুরী। পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিকদের দ্বারা রচিত বিভিন্ন কারিকুলাম তৈরী করে, কুমলমতি শিশুদের এসব নাস্তিকতায় দিক্ষিত করার অশুভ পায়তারা চলিতেছে। যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।

কিছু শিক্ষা আছে, যা হাতে কলমে দিতে হয় না। যা প্রকৃতিগতভাবে তাদের পূর্ব পুরুষদের চলার ধরণ থেকেই শিখে ফেলে। ডাল, ভাত ঘর গোছানো বা প্রেম পত্র এসব নিজ থেকেই উত্তরাধীকারীর নিকট থেকে শিখে ফেলে। এসব শিখার জন্য বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং করানো হাস্যকর। অশুভ শক্তি এসব কার্যক্রমের জন্য তৎপর। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী- কিভাবে চলবে তা কিন্তু তাদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এখানে কোন শিক্ষকের প্রয়োজন হয় না।

 

বর্তমানে জাতীয় পাঠ্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের বলতে চাই, পূর্বের কারিকুলাম অনুসরণ করা এবং বিতর্কিত সকল কার্যক্রম এড়িয়ে চলা। নতুন কারিকুলামে অনেক মহানুভব ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে আগ-ডুম বাগ-ডুম এসব আবুল তাবুল সংযোজন করে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষককে হাসির পাত্র হিসাবে উপহাস করা হইয়াছে। আর শিক্ষক যেখানে উপহাসের পাত্র, সেখানে ছাত্র তাকে কিভাবে শ্রদ্ধাসম্মান করবে তা কিন্তু বোধগম্য নহে? সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে কি কোমলমতি অভিভাবকদের কন্ঠরোধ করা যাবে? ড: কুদরত-ই খোদা বা সাদেক কমিশনের আলোকে যে শিক্ষানীতি প্রনীত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবী।
লেখক, সভাপতি- সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন