Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ১৭ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেসি নাকি তাপিয়া, স্কালোনির চাকরি ছাড়তে চাওয়ার নেপথ্যে কে?

admin

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২:১৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২:১৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
মেসি নাকি তাপিয়া, স্কালোনির চাকরি ছাড়তে চাওয়ার নেপথ্যে কে?

স্পোর্টস ডেস্ক:
হঠাৎই বোমা ফাটালেন লিওনেল স্কালোনি। জানালেন, আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে থাকবেন কিনা, ভাবছেন তিনি। যার হাত ধরে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ ফিরেছে আর্জেন্টিনার ঘরে, তিনি হঠাৎ এমন ইঙ্গিত কেন দিলেন? দানা বাঁধতে থাকে প্রশ্ন।

কারণ খুঁজতে থাকে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম। কৌতূহলের জন্ম হয় ফুটবল বিশ্বে। একেক সংবাদমাধ্যম একেক রকম কারণ সামনে আনতে থাকে। মোটা দাগে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এমন- আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন কিংবা খেলোয়াড়দের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে চাকরি ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্কালোনি। আসলে এর নেপথ্যে কে বা কারা?

ঘটনার শুরু থেকে শুরু করা যাক। গত মাসে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ খেলতে ব্রাজিলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মারাকানার ম্যাচটি দাপট দেখিয়ে ১-০ গোলে জিতেও নেয় তারা। কিন্তু ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্কালোনি জানান, দুর্দান্ত গতিতে এগোতে থাকা আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন কিনা, ভাবছেন তিনি।

এবার আরেকটু পেছনে ফেরা যাক। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্সে চাকরি যায় তখনকার কোচ হোর্হে সাম্পাওলির। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পান স্কালোনি। এএফএ’র সিদ্ধান্ত মোটেও ভালোভাবে নেয়নি আর্জেন্টিনার ফুটবল বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক। কারণও ছিল। এর আগে সিনিয়র পর্যায়ে কোচিংয়ের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না স্কালোনির। আর্জেন্টিনা দলের সহকারী ও বয়সভিত্তিক দলের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল সম্বল। এমন একজনকে বিশ্বকাপ প্রত্যাশী দলের দায়িত্ব দিলে কথা তো উঠবেই।

স্কালোনি অবশ্য সব সমালোচনার কড়া জবাব দিয়ে ২০২১ সালে আর্জেন্টিনাকে জেতান কোপা আমেরিকার শিরোপা। মাঝে লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে ইউরোপ চ্যাম্পিয়নের লড়াই- ‘ফিনালিসিমা’র শিরোপাও আসে। আর সবশেষ চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত হয় ২০২২ সালের বিশ্বকাপে। ১৯৮৬ সালের পর আবার বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে মাতে লাতিন আমেরিকার দেশটি।

বহুলপ্রতীক্ষিত বিশ্বকাপ জেতার পর স্বভাবতই এএফএ’র সঙ্গে চুক্তি বাড়ে স্কালোনির। দায়িত্ব পান ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ শেষেই ইঙ্গিত দেন আর্জেন্টিনার কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর। জানান, ‘আমাকে এখন বল থামাতে হবে, ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেকটা সময় ধরেই ব্যাপারটি নিয়ে আমি ভাবছি।’

সংবাদ সম্মেলনে হঠাৎ এই বক্তব্য দেওয়াটা মোটেও ‘কথার কথা’ নয়। সেটির আরও বড় প্রমাণ মেলে মারাকানা ম্যাচের মিক্সডজোনে। আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় জানান, তারা বিস্মিত হয়েছেন কোচের কথায়। মিডফিল্ডার আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টার যেমন জানিয়েছেন, কোচ তাকে ‘সবকিছুর জন্য’ ধন্যবাদ দিয়েছেন।

কী এমন ঘটলো যে, সাফল্যের বানে ভাসতে থাকা একজন কোচ হুট করে এমন মন্তব্য করলেন? কারণ হিসেবে সামনে আসে এএফএ সভাপতির সঙ্গে ‘মনোমালিন্য’। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্ত’ দাবি করে, নতুন চুক্তির সময় তাপিয়াকে যে ‘শর্ত’ দিয়েছিলেন স্কালোনি, সেগুলো পূরণ করেননি এএফএ সভাপতি। এছাড়া বিশ্বকাপের পর এক বছর হয়ে গেলেও স্কালোনির কোচিং স্টাফ কিংবা খেলোয়াড়রা এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের বোনাস পাননি।

তবে তাপিয়ার দিকে আঙুল তোলার আগে এই দুজনের সম্পর্কের গভীরতা জানা প্রয়োজন। ২০১৮ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় সাম্পাওলি চাকরি হারানোর পর ‘আনকোরা’ স্কালোনির ওপর আস্থা রেখেছিলেন এই তাপিয়া-ই। আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন ডিয়েগো সিমিওনে, মাউরিসিও পোচেত্তিনো ও মার্সেলো গায়ার্দো। বিশ্লেষক ও সমর্থকদের বিচারে এই তিনজনই ছিলেন ফেভারিট।

তাপিয়া তাদের বাদ দিয়ে স্কালোনিকে বেছে নেওয়ায় চরম সমালোচনা হয়। কথার তীরে বিদ্ধ হন স্কালোনি নিজেও। অথচ বিশ্বকাপ জেতার পর এই স্কালোনিই এখন আর্জেন্টিনার জাতীয় বীর। সমর্থকরা আর্জেন্টিনার দলকে আদর করে ডাকে ‘লা স্কালোনেতা’। তার ছোঁয়াতেই আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের যেকোনও সময় চেয়ে ভালো।

শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক দৃশ্যকোণ থেকেও পাল্টে গেছে আর্জেন্টিনার ফুটবল। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দল। আর এখানেই চলে আসে স্কালোনি-তাপিয়ার সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়টি!

সেটা কীভাবে? আজেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন সের্হিয়ো মাসা। যিনি দেশটির অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। ‘টিওয়াইসি স্পোর্ত’-এর খবর, এই মাসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এএফএ সভাপতি তাপিয়ার। নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে মাসা চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছবি তুলতে।

কিন্তু লিওনেল মেসিরা রাজনৈতিক এই অনুরোধে সাড়া দেননি। তখন সম্পর্কের খাতিরে স্বভাবতই বিষয়টি তাপিয়াকে জানান মাসা। খেলোয়াড়রা সাড়া না দেওয়ায় তাপিয়া বিষয়টি নিয়ে চাপ দেন স্কালোনিকে। যাতে তিনি মেসিদের বুঝিয়ে ছবি তুলতে রাজি করান।

২০ নভেম্বর হয়েছে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মারাকানায় ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার একদিন আগের এই নির্বাচনে হেরে যান মাসা। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী হাভিয়ের মিলেই। ঘনিষ্ঠজনের পরাজয়ে তাপিয়ার চাপ আরও বাড়তেই পারে স্কালোনির ওপর। কারণ খেলোয়াড়দের তিনি রাজি করাতে পারেননি ছবি তোলার ব্যাপারে। নির্বাচনের পরের দিনই ব্রাজিল ম্যাচ শেষে স্কালোনির সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতে চাইলে আপনি দুয়ে দুয়ে চার মেলাতেই পারেন!

আরেকটি কারণ হতে পারে গণমাধ্যমের সামনে স্কালোনির বক্তব্য। শুধু এবারই নয়, এর আগেও আর্জেন্টিনার চাকরির চাপ নিয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জেতার পথে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন স্কালোনি। ওই সময়ও লাতিন আমেরিকায় লকডাউন চলছিল। দল হিসেবে খেলতে গেলেও সবাই সবার থেকে আলাদা ছিলেন। এরপর ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইয়েও একই রকম পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়েছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বিরতিতে তিনটি ম্যাচ ছিল বাছাইয়ের। সেসময় বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে পড়েছিলেন এই কোচ।

ওই সময়কার ঘটনা স্কালোনি বলেছেন, এক রেডিও অনুষ্ঠানে। ২০২২ বিশ্বকাপের আগে ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শুধু বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম। অনেকদিন পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা ছিল না। বিশ্বকাপ নিয়ে আমি কথা বলার অবস্থানেই ছিলাম না, কারণ আমার মাথায় ছিল শুধুই পরিবার।’

বিশ্বকাপ জয়ের পর আরেক অনুষ্ঠানে স্কালোনি জানিয়েছিলেন, আর্জেন্টিনার দায়িত্ব সামলানো এতটাই কঠিন যে, বিশ্বকাপ জেতার পর এক মাস ধরে ভীষণ পেটের সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল তাকে।

বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে স্কালোনির দেওয়া এইসব বক্তব্যে নাকি অসন্তুষ্ট মেসি। বুয়েনস এইরেস-ভিত্তিক ‘রেডিও টেন’-এর খবর এমনই।

মেসির কর্মকাণ্ডেও নাকি অসন্তুষ্ট স্কালোনি। বিশেষ করে, মারাকানার ঘটনাটি মেনে নিতে পারেননি আর্জেন্টিনার কোচ। ম্যাচ শুরুর আগে গ্যালারিতে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করে ব্রাজিল পুলিশ। অনেক সমর্থক আহত হন। এই ঘটনায় সতীর্থদের নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান মেসি। যদিও এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কোচ স্কালোনির সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করেননি মেসি। অধিনায়কের একক এই সিদ্ধান্তে নাকি ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্কালোনি।

যদিও বৃহস্পতিবার রাতে কোপা আমেরিকার ড্র অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সব বিষয় পরিষ্কার করেছেন স্কালোনি। জানিয়েছেন, তাপিয়া কিংবা মেসির সঙ্গে তার কোনও ঝামেলা নেই। দুজনের সঙ্গেই সম্পর্ক ভালো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাপিয়ার পোস্ট করা ছবিতে সেটিরই প্রতিফলন। তাপিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল স্কালোনিকেই দেখা গেছে।

কিন্তু সেটি কি শুধুই লোক দেখানো? জ্বলে ওঠা সম্পর্কের আগুন থামানোর চেষ্টা তাদের? কারণ স্কালোনির ‘সোপ অপেরা’ এখনও শেষ হয়নি। আর্জেন্টিনা কোচ জানিয়েছেন, চাকরি ছাড়ার ভাবনা এখনও আছে তার মাথায়। আগের মতোই!

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 999 বার

শেয়ার করুন