
সম্পাদকীয় :
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি আশাব্যঞ্জক তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য চিহ্নিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিয়েছে মিয়ানমার। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ছয় ধাপে এ তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। শুক্রবার ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে জানান।
বস্তুত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো বাস্তব অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। এই প্রথম মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি প্রত্যাবর্তনের তালিকা প্রদান করল। এবার এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, মূল তালিকায় থাকা ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
এটাও যেন কেবল প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালো তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। এদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার তিনি এ আহ্বান জানান। এজন্য আমরা জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করব, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ মহাসচিব জোরালো ভূমিকা রাখবেন। জানা যায়, রাখাইন বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন এক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ জটিলতা দূর করার জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রত্যাবাসন দেরি হওয়ায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। তাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতে সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা বসবাস করছে। আমাদের পক্ষ থেকে বছরের পর বছর এই বোঝা টেনে নেওয়া সম্ভব নয়। দাতা সংস্থা ও দেশগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং তা আগামীতে আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা হবে, এটাই প্রত্যাশা। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার