
স্টাফ রিপোর্টার:
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি নিয়ে সুখবর দিল সিলেট। প্রথমবারের মতো সিলেটস্থ ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট যাচ্ছে স্পেন। আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশ্যে ডানা মেলবে মাল্টাভিত্তিক গ্যালিস্টার ইনফিনিটি এভিয়েশনের ফ্লাইট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্পেনে গার্মেন্টস পণ্য পাঠানোর মাধ্যমে ইউরোপের বাজারে রফতানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। সিলেটে একটি প্যাকেজিং হাউস নির্মাণ করা গেলে যুক্তরাজ্যসহ প্রবাসী অধ্যুষিত ইউরোপের দেশগুলোতে এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যও রফতানি করা সম্ভব হবে।
সিলেট থেকে বর্হিবিশ্বে পণ্য রফতানির লক্ষ্যে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত ‘গোয়ালগাদ্দা সীম’, নাগা মরিচ, খাসিয়া পান, তইকর, ফরাশ ও সীমের বিচি, ঢাকাদক্ষিণের কচুমূখী ও লতি এবং সাইট্রাস ফল হিসেবে পরিচিত জারা লেবু, আদালেবু ও সাতকরার প্রচুর চাহিদা রয়েছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
মুলত ইউরোপের যেসব দেশে সিলেটিদের বসবাস বেশি সেখানেই এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিলেটি অধ্যূষিত এলাকার সুপারশপেও এসব পণ্যের ব্যবসা ভাল। একসময় বাংলাদেশ বিমানের যাত্রীবাহী ফ্লাইটে করে এসব পণ্য যুক্তরাজ্যে রফতানি হতো। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত পূরণ করতে না পারায় সিলেট থেকে এসব পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরের প্যাকিং হাউসে পণ্য প্যাকিং কওে ঢাকা থেকে এসব পণ্য রফতানি করছেন। সিলেট থেকে যাতে সহজে আরও বেশি পরিমাণ কৃষি পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা যায় সেই বিষয়টি পরিকল্পনায় নিয়ে মূলত ওসমানী বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক ‘এক্সপোর্ট কার্গো হাউস’ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কার্গো কমপ্লেক্স করা হলেও সিলেটে নির্মাণ করা হয়নি প্যাকিং হাউস। যে কারণে সিলেট থেকে ইউরোপে কৃষি পণ্য রফতানির সম্ভাবনা আটকে যায়।
নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরের প্যাকিং হাউসের ল্যাবে টেস্ট ও প্যাকিং করে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে রফতানি অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে কৃষি পণ্য রফতানির সম্ভাবনা আটকে যায় প্যাকিং হাউস। অবশেষে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে ইউরোপে গার্মেন্টস পণ্য রফতানির উদ্যোগ নেয়।
আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে এই নবযাত্রার। আজ ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে স্পেনের জারাগোজা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে মাল্টাভিত্তিক গ্যালিস্ট্যার ইনফিনিট এভিয়েশনের ফ্লাইট। এটি হবে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথম কোন কার্গো ফ্লাইটের শুভ সূচনা। এর আগে বিদেশি কোন যাত্রীবাহী কিংবা কার্গো ফ্লাইটও নামেনি ওসমানীতে।
সিলেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার পর ওসমানী হতে পারে রফতানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সদ্য সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল জব্বার জলিল জানান, ওসমানী থেকে ইউরোপে গার্মেন্টস রফতানি শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের আমদানি-রফতানির নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। এখন ব্যবসায়ীরা শুধু রফতানি নয়, ইউরোপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিও করতে পারবেন। তবে সিলেটে একটি প্যাকিং হাউস করা না গেলে কার্গো হাউস নির্মাণের মুল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। শুধুমাত্র একটি প্যাকিং হাউস করা গেলে সিলেট অঞ্চল থেকে পুরো ইউরোপের বাজারে বিভিন্ন জাতের কৃষি পণ্য রফতানি করা যাবে। এতে রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলেও কৃষি বিপ্লব হবে।
এ প্রসঙ্গে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, সিলেট থেকে স্পেনে পণ্য রফতানি সিলেট তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সিলেটের রফতানিকারকরাও ধীরে ধীরে ইউরোপের বাজারে পণ্য রফতানিতে অভ্যস্ত হবেন। আপাতত সপ্তাহে একটি কার্গো ফ্লাইট স্পেন যাবে। রফতানিকারকদের চাহিদা বাড়লে ফ্লাইটও বাড়বে। সিলেটে একটি প্যাকেজিং হাউস নির্মাণ করা গেলে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সিলেটে উৎপাদিত কৃষিপণ্যও রফতানি সম্ভব হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার