Daily Jalalabadi

  সিলেট     শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১৯শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“২০২৪ জাতীয় সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যানের নিকট খোলা চিঠি”

admin

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫ | ০৪:৫৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ মে ২০২৫ | ০৪:৫৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
“২০২৪ জাতীয় সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যানের নিকট খোলা চিঠি”

এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
মাননীয়,
অন্তরবর্ত্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান জনাব ড. মোহাম্মদ ইউনুস, আমার সালাম, শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা, অভিরাম ভালোবাসা রহিল। আপনার মেধা, প্রজ্ঞা এর মাধ্যমে আলোকিত বিশ্বগড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবেন নিশ্চয়ই। বাংলাদেশের প্রতিটি খেটে খাওয়া মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে জাতি পেয়েছে আপনাকে। বিশ্ববাসী পেয়েছে বিশ্বমানের সেলিব্রেট ও তাহাদের ভালোবাসার মানুষটিকে উপযুক্ত স্থানে। জাতিসংঘ সহ বিশ্বমানের সংস্থা সমুহে আপনার প্রানবন্ত উপস্থিতি, সম্মান দেখে আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত ও আবেগ আপ্লুত। জীবনটাকে করেছেন স্বার্থক। দেশের ক্রান্তিকালীন সময়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখে আমরা অভিভূত। আপনাকে প্রশংসা দিয়ে খাটো করতে চাইনা। আপনি অসীম। আমার পক্ষ থেকে অবিরাম ভালবাসা ও শুভ কামনা অনন্তকাল।
মাননীয়: প্রধান উপদেষ্টা,
আপনি বিশ্বমানের কুটনীতিবিদ। আপনার কূটকৌশল বিশ্বব্যাপি সামাধৃত। জ্ঞান দেওয়ার এবং নেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। তবুও বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে কতিপয় প্রস্তাবনা তুলে ধরছিঃ
১ম প্রস্তাবঃ ২৬/৪/২০২৫ ইং তারিখে সিলেটে ১১ টি সংস্কার কমিটি প্রদত্ত সারসংক্ষেপ নিয়ে সুজনের বিভাগীয় গোলটেবিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জনাব দিলীপ সরকার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন এবং স্বাধীন চিন্তাধারা তুলে ধরার আহবান জানান। আমার বক্তব্যে সম্পূর্ণভাবে এই নাতিদির্গ প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করি। ডিজিটাল যুগে বিভিন্ন ধারা, উপধারা, বিধি, প্র-বিধি ইত্যাদির কোন প্রয়োজন নেই। বিশ্বের আদি সভ্য রাষ্ট্র ও গনতন্ত্র চর্চার চারন ভূমিতে বৃটেনে যদি লিখিত সংবিধান ছাড়া চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবেনা? অতীত কার্যক্রমই সংবিধান বা ম্যাগনা কার্টার মাধ্যমে তাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেই আলোকে ছোট পরিসরে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করে রাজনৈতিক দলসমূহের স্বাক্ষরে ও সম্মতি পত্রে “জাতীয় সনদ” বাংলাদেশের ম্যাঘনা কার্টা নামে স্মারকগ্রন্থ দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের হাতে পৌঁছে দেওয়া।
২য় প্রস্তাবঃ ১৯৯০ এর গনঅভ‚ত্থানের পর ৩ জোটের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা। ৩ জোটের রূপরেখায় অনেক সুন্দর ও জাতিকে আশা-আকাংখার স্বপ্ন দেখালেও ১টি মাত্র শর্ত ঐক্যমতের ভিত্তিতে পবিত্র সংসদে পাশ করানো হয়। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা। সংসদীয় পদ্ধতি সংসদের মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, অনুরূপ প্রধানমন্ত্রী ও সেই একই ক্ষমতার অধিকারী থেকে যান। সংসদ সদস্যগন প্রধানমন্ত্রীর কর্মচারী মাত্র। তাহাদের নিজস্ব মতামতের কোন মূল্য নেই। এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সচিবালয় যে কোন আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে ঐক্যমতের ভিত্তিতে আইনের কাঠামো তৈরি করে পবিত্র সংসদে উপস্থাপন করা এবং সংসদ কর্তৃক তাহাদের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে সংশোধন বিয়োজন এর মাধ্যমে জনবান্ধব আইনে রুপান্তরিত করে পাশ করানো। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর মত যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে বরেন্য ব্যক্তিকে সাধারণ জনগনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্টের কার্যালয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্দলীয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন চুড়ান্ত করিবেন। উক্ত মনোনয়ন পবিত্র সংসদ থেকে সর্বসম্মত বা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করিবেন।
৩য় প্রস্তাবঃ স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা নুন্যতম বি.এ বা তাহার সমমানের থাকা বাধ্যতামূলক। স্কুটূনীর পুর্বে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও হলফনামায় বর্নিত সম্পদের সত্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক। প্রার্থী কোন মিথ্যা তথ্য দিয়া থাকলে তাহার প্রার্থীতা বাতিল এবং তাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে রাষ্ট্র বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের ও শাস্তি নিশ্চিত করা। হলফনামায় বর্নিত সম্পদ ব্যতিত অন্য কোন সম্পদ তদন্তকারী কমিটি পেয়ে থাকলে প্রার্থীর সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকুলে প্রেরন করা। নির্বাচনি ফরমে স্ব-শিক্ষত প্রথাটি বিলুপ্ত করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে সামগ্রিক অর্থে দেশের বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হবে। প্রার্থী নিজ উদ্যোগে তাহার শিক্ষা জীবন, সামাজিক কর্মকান্ডের বিস্তারিত বিবরন, নিজ খরচে, প্রতিটি ভোটারের নিকট লিফলেট আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। মাইকিং প্রথা বিলুপ্ত করা। রাষ্ট্র ভোটারদের ভোট প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরা। ভোটারগন নিজ নিজ কেন্দ্রে উপস্তিত হয়ে ভোট প্রদানে উৎসাহিত করা। জাল ভোট প্রদানকারী ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট ভ্রাম্যমান আদালত নুন্যতম ৬ মাসের শাস্তি প্রদান করা। এক্ষেত্রে আপীলের কোন ব্যবস্থা থাকবেনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ভোট দানের গুরুত্ব তুলে ধরা। প্রার্থীর প্রতিনিধি অহেতুক চ্যালেঞ্জ করিলে তাহাকেও উক্ত শাস্তি প্রদান করা।
৪র্থ প্রস্তাবঃ স্থানীয় সরকার বা জাতীয় সংসদের ম্যায়াদ হবে শপথ গ্রহনের দিন থেকে ৫ (পাঁচ) বছর। পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ৯০ (নব্বই) দিন পূর্বে নির্বাচনী এলাকার নির্বাহী ক্ষমতা স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচন কমিশনের নিকট চলে যাবে। অযথা কোন প্রতিনিধি সীমানা নির্ধারন বা সময় ক্ষেপনের জন্য কোন আদালতে মামলা করিতে পারিবেন না। মামলা করে থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে নির্বাচনি কার্যক্রম বাহিরে রেখে নির্বাচন সম্পূর্ন করা।

৫ম প্রস্তাবঃ নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির পরামর্শের ভিত্তিতে। যেহেতু ৯০ দিন পূর্বে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের, সেহেতু প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাগন নির্বাচন কমিশনের আদেশ পালন করা বাধ্যতামূলক। কোন কর্মকর্তা আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে, তাৎক্ষণিক তাহাকে সাসপেন্ড ও চাকুরী বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্ছ শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তাহার নেতৃত্বে গঠিত হবে ৯ সদস্যের একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। লজিষ্টিক সাপোর্ট কার্যক্রম সুষ্ট সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে একটি সচিবালয়। প্রার্থি যদি গুরুতর অন্যায় হয়েছে, মর্মে কমিশনের নিকট আবেদন করে, তাহলে কমিশনকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে প্রার্থীর বিচার নিশ্চিত করা। প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থায় ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করা।
৬ষ্ঠ প্রস্তাবঃ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে দেশের প্রতিথযশা, খ্যাতিমান, আইনজ্ঞ, বিচক্ষন, প্রাজ্ঞ ও দলনিরপেক্ষ ব্যাক্তিকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিবেন। তাহার নেতৃত্বে উপযুক্ত গুনাবলী সম্পূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজ কোর্ট সহ সকল অধঃস্তন আদালত গঠিত হইবে। এসব কার্যাবলী সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন সচিবালয় থাকিবে। কোন বিচারপতির বিরুদ্ধে শৃংখলা ভংগ, অসাদাচারন, বিচার প্রার্থীর বিচারকে অহেতুক প্রলম্বিত করার অভিযোগ যাচাই, বাছাই ও বিচারের জন্য প্রধান বিচারপতি বা তাহার মনোনীত ৩ সদস্যের কমিটি দেখা শুনার জন্য নিয়মিত তদারতি করা। কোত বিচারকের বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়া গেলে চাকুরী বা নিয়োগ বিধি অনুযায়ী তাহার সর্বোচ্ছ শান্তি নিশ্চিত করা।
পরিশেষে স্মরন করিয়ে দিতে চাই, ফ্যাসিষ্ট হাসিনা ও সরকার পবিত্র সংসদ কতৃক তাহার পরিবারের আজীবন নিরাপত্তা ও সরকার পরিচালনায় তাহার বিশেষ এলাকার লোকদের অগ্রাধিকার এর ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে নিরাপত্তা ও ক্ষমতা দির্ঘায়িত করতে যখন মরিয়া তখন আবাবিলদের ডাকে সকল কানাকানুর ভেংগে ফ্যাসিষ্ট ও তাহার দুষরদের দেশ ত্যাগ করাতে বাধ্য করেছেন। স্মরন করিয়ে দিতে চাই, বিশ্বের মানচিত্রে কোন অভ্যুত্থান বা বিপ্লব সংবিধান বা আইন কানুন মেনে সংগঠিত হয়নি। যেনে রাখা ভাল “ÒNECESSITY KNOWS NO LAW”। প্রচলিত বিধি বিধান মেনে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে, রাষ্ট্র তাহার অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জন করে সাধারন জনগনের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধশালী জাতি হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলতে পারবে “আমরা বাংলাদেশী”।
লেখক, সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবা: ০১৮১৯-১৭৬২১৭

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন