স্টাফ রিপোর্টার:
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি আত্মহত্যা করেননি, বরং তাদের হত্যা করা হয়েছে। আর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন দুজন। তবে ডিএনএ অস্পষ্টতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত টাস্কফোর্সের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে চ্যানেলে২৪।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। রান্নাঘরে থাকা ছুরি ও বঁটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। দীর্ঘদিন এ মামলার তদন্ত চললেও কোনো কিনারা হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই মামলার তদন্তভার পড়ে টাস্কফোর্সের হাতে। নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স।
গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে দাখিল করা হয় টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন। সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন সাগর-রুনি। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি জানায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারেন, এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। রুনি নারী হিসেবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্ল্যাড পেটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।
ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। যাদের মধ্যে দুজন সাগর-রুনি, তবে অন্য দুজনের ডিএনএ কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারেনি টাস্কফোর্স। তাই হত্যার মোটিভ ও হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, সে বিষয়টিও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করা যায়নি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যার রাতের পরদিন সকাল) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় আলামত। তবে রান্নাঘরের বারান্দা সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।
এদিকে সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় পাঁচ থেকে ছয়জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে রুনির অফিসিয়াল নথি ঘেঁটেও তার সঙ্গে কারও শত্রুতার প্রমাণ পায়নি টাস্কফোর্স। আলোচিত বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড নিয়ে রিপোর্টের জেরে এ হত্যারও কোনো তথ্য মেলেনি। সাগরের মালিকানাধীন এনার্জি বাংলা ডটকমে কোনো সংবাদের জেরে, পেশাগত কারণেও এই হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র মেলেনি।
এ ছাড়া পারিবারিক কলহের কারণে একজনকে হত্যার পর অন্যজনের আত্মহত্যার তথ্য-প্রমাণও পায়নি টাস্কফোর্স। ক্রাইমসিন পর্যালোচনা, আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে, আত্মহত্যার প্রমাণ মেলেনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ওই সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত ছিলেন সাগর। আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আব্দুল খালিক
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
উপ-সম্পাদকঃ ফুজেল আহমদ
প্রকাশক কর্তৃক উত্তরা অফসেট প্রিন্টার্স কলেজ রোড, বিয়ানীবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও শরীফা বিবি হাউজ, মেওয়া থেকে প্রকাশিত।
বানিজ্যিক কার্যালয় :
উত্তর বাজার মেইন রোড বিয়ানীবাজার, সিলেট।
ই-মেইল: dailyjalalabadi@gmail.com
মোবাইল: ০১৮১৯-৫৬৪৮৮১, ০১৭৩৮১১৬৫১২।