
শান্তিগঞ্জ সংবাদদাতা:
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সকল মানুষের কাছে নতুন এক পরিচিতি পেয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম সিএনজি অটোরিকশা চালক পায়েল। শান্তিগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য চালকের মতো তাকে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে শান্তিগঞ্জ বাজার চত্বরে। সিএনজি দিয়ে কখনো লোকাল ও রিজার্ভ ট্রিপ দেন পায়েল। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে তিনিই প্রথম এই এলাকার একজন সিএনজি চালক।
তার পুরো নাম তোফায়েল আহমেদ পায়েল(২৫)। তার জন্মস্থান শান্তিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার মদনপুর গ্রামে হলেও তার জীবনের বড় অংশ বা সময় কাটিয়েছেন শান্তিগঞ্জে। কম করে হলেও এই এলাকার আশপাশ ও মানুষের সাথে রয়েছে তার দীর্ঘ ১০ বছরের সম্পর্ক। এর আগে পায়েল একটি হিজড়া সংগঠনের নিয়মিত একজন সদস্য হিসেবে প্রায় ৯ বছর শান্তিগঞ্জ সহ সুনামগঞ্জ জেলার অন্যসব জায়গায় নাচ গান ও বিয়ে বাড়িতে গিয়ে এবং মানুষের বিভিন্ন দোকানে, যানবাহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জন করলেও এখন নিজেকে নতুনভাবে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে চান তিনি।
তার ভাষ্যমতে, এই সিএনজি ড্রাইভিংয়ে জীবিকা নির্বাহ করা তাকে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। সিএনজি গাড়ি চালিয়ে তার দৈনিক আয় এখন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আজ থেকে ৫ বছর আগে পায়েল অটো গাড়ি চালনার পরিকল্পনা করলেও সেখানে কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।
পঞ্চম শ্রেনীতে লেখাপড়ার সময় পায়েলের শারীরিক ত্রুটির দেখা মেলে।সেই সময়ে অনেক ডাক্তারি করা হলেও আর সুরাহা হয়নি। এজন্য সামাজিকভাবে ও সহপাঠীদের মাধ্যমে তাকে অনেক বুলিং এর স্বীকার হতে হয়েছে। তারা চার ভাই। তাদের পরিবারে সে একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ভাইয়েরা বিয়ে করে তাদের পৃথক সংসার। পায়েলের দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না। পায়েল নিজের পায়ে দাড়াবে বলে ২ বছর আগে তার ভাইকে অনুরোধ করে সিএনজি ড্রাইভিং শিখে ফেলে এবং একটা সিএনজি নিজে কিনে ফেলে। সিএনজি কিনে সে চালাবে এ জার্নিটা অত সহজ ছিল না পায়েলের জন্য। তখন বাঁধা হয়ে দাড়ায় তার হিজড়া সংগঠন। তারা তাকে গাড়ি চালাতে নিষেধ করে ও বিভিন্ন হুমকিও প্রদান করে। পাশাপাশি নিজে একজন শারিরীক প্রতিবন্ধীও সে। এভাবে সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে পায়েল ছুটে চলছে তার নিজস্ব গন্তব্যে।
এ বিষয়ে পায়েল সাংবাদিকদের বলেন, আমি সিএনজি ড্রাইভিং পেশায় আসছি এক মাস হলো। এর আগে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, বিয়ে বাড়ি, বিয়ের গাড়ি ও প্রতিটি দোকান থেকে টাকা তুলতাম এবং নাচ-গান করে অর্থ উপার্জন করে নিজের ভরণপোষণের চাহিদা মেটাতে পারতাম না। তাই মানুষের কাছে হাত পাততে হতো। আমার কাছে মনে হতো এটা খুব অসম্মানের কাজ। সিএনজি চালানোর পর থেকে এখন আর কারো কাছে হাত পাতা লাগে না। আমরা আর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থাকব না। সবাই সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো।
তিনি বলেন, আমি নিজেকে একটা সৎ ও সম্মানজনক পেশায় নিয়ে এসেছি এবং সুখী সুন্দর জীবনে ফিরতে পেরেছি বলে খুব ভালো লাগছে। আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের যারা আছেন তাদেরকে এভাবে বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হওয়া দরকার।
পায়েল আরো বলেন, মানুষের যে ৫ টি মৌলিক অধিকার রয়েছে তা নিশ্চিত হোক এবং আমি বুলিং এর শিকার থেকে মুক্তি চাই।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার