Daily Jalalabadi

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ২২শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের অনন্য দৃষ্টান্ত

admin

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫ | ০২:১৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২২ মে ২০২৫ | ০২:১৩ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের অনন্য দৃষ্টান্ত

সম্পাদকীয়:
আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বর্তমানে দুরারোগ্য প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হইয়াছেন। হোয়াইট হাউজ সূত্রে খবর, তাহার দেহে ‘আক্রমণাত্মক’ প্রকৃতির প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়িয়াছে। যদিও পূর্বে হোয়াইট হাউজ জানাইয়াছিল যে, বাইডেনের ত্বকের ক্যানসার ছিল, যাহা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্বেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হইয়াছিল। তবে সম্প্রতি লরা লুমার নামক এক প্রভাবশালী মার্কিন রাজনীতিবিদ দাবি করিয়াছেন যে, বাইডেন ‘টার্মিনাল ক্যানসারে’ ভুগিতেছেন এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে তিনি মারা যাইতে পারেন।

লুমার যাহাই বলুন না কেন, বাইডেনের এই অসুস্থতার খবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের চিত্র দেখা গিয়াছে। সাধারণত চরম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও বহু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি বাইডেনের দ্রুত আরোগ্য কামনা করিয়াছেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সাধারণত বাইডেনের কড়া সমালোচক, তিনি এক বার্তায় বাইডেনের ‘দ্রুত ও সফল আরোগ্য’ কামনা করিয়াছেন। তিনি জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডিকে উদ্দেশ্য করিয়া শুভকামনা জানাইয়াছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং তাহার স্ত্রী বাইডেন পরিবারের জন্য প্রার্থনার কথা জানাইয়াছেন। ডেমোক্র্যাট নেতা ও প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তো বটে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মার্জোরি টেইলর গ্রিন ও হাউজ স্পিকার মাইক জনসন বাইডেনের আরোগ্য কামনা করিয়াছেন। আবার মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বাইডেনকে ‘একজন প্রকৃত ভদ্র ব্যক্তি’ এবং ‘মর্যাদা, শক্তি ও সহানুভূতির প্রতীক’ বলিয়া অভিহিত করিয়া দ্রুত সুস্থতা কামনা করিয়াছেন।

উন্নত বিশ্বের রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সেখানে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকিলেও ব্যক্তিগত জীবনে একে অপরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি বজায় রাখা হয়। বিশেষত, অসুস্থতার মতো মানবিক সংকটের মুহূর্তে সকল রাজনৈতিক বিভেদ ভুলিয়া সকলে একযোগে শুভকামনা জানায়, যাহা তাহাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপক্কতা প্রমাণ করে। যেইখানে ব্যক্তিগত আক্রমণের পরিবর্তে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বিতর্ক হয় এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করা হয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও মসৃণ ও শান্তিপূর্ণ হয়, যেইখানে পরাজিত পক্ষ বিজয়ী পক্ষকে অভিনন্দন জানায় এবং সহযোগিতা করে। এই ধরনের সৌজন্যবোধ একটি সুসংহত ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিচায়ক।

পক্ষান্তরে, উন্নয়নশীল দেশগুলির রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেক ক্ষেত্রেই অধঃপতনের শিকার। এইখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু জ্ঞান করা হয়। এইখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহনন একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়। মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা-মোকদ্দমা দিয়া অযথা হয়রানি করা হয়। ইহার রেশ যুগের পর যুগ চলিতে থাকে বলিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা লাগিয়াই থাকে। এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের অসুস্থতা বা ব্যক্তিগত সংকটও রাজনৈতিক ফায়দা লুটিবার হাতিয়ারে পরিণত হয়। কোনো কোনো দেশে রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুতে জানাজা বা শেষকৃত্যমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিতেও অনেকে দ্বিধান্বিত থাকেন। পরিবার-পরিজনের কাহারো মৃত্যুতে শোক-সান্ত্বনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করিতে কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাহার বাসায় গেলেও তাহার মুখের উপর দরজা বন্ধ করিয়া দিতে দেখা যায়। কেননা রাজনৈতিক হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, এই সকল দেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করে না। ফলে ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও রাজনৈতিক সহিংসতা প্রায়শই দেখা যায়। শিক্ষা ও নৈতিকতার অভাব, দারিদ্র্য, আইনের শাসনের দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব, ক্ষমতার লোভপ্রভৃতি রহিয়াছে এই অবনতির মূলে। দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনও অনেক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করে এবং সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশে বাধা হইয়া দাঁড়ায়।

উপর্যুক্ত পরিস্থিতিতে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। এই জন্য এই সকল দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করিতে হইবে। নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করিতে হইবে, যাহাতে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে না থাকেন। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করিতে হইবে, যাহাতে তাহারা নির্ভয়ে কাজ করিতে পারেন। সর্বোপরি রাজনৈতিক দলগুলির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করিতে হইবে। পারসোনাল কাল্ট বা ব্যক্তিপূজার পরিবর্তে আদর্শ ও নীতির উপর গুরুত্ব দিতে হইবে। তাহা হইলেই উন্নয়নশীল দেশগুলিও এক উন্নত ও সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দিকে অগ্রসর হইতে পারিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন