Daily Jalalabadi

  সিলেট     শনিবার, ৩১শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি গেল কই?

admin

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫ | ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ | ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সিলেটে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি গেল কই?

স্টাফ রিপোর্টার:
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর সারাদেশে বিজয় উল্লাস শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও ছাত্র-জনতার সাথে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষজন বিজয় মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামেন। গোটা সিলেট মহানগরীজুড়ে হয় আনন্দ মিছিল ও উচ্ছ্বাস। এই আনন্দ মিছিলকে পুজি করে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় সিলেট মহানগরীর থানা ও ফাঁড়িতে। চলে ভাঙচুর আর লুটপাটের মচ্ছব। এই লুটপাটে খোয়া যায় পুলিশের বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গুলি।

দীর্ঘদিন পাড়ি দেয়ার পর পরবর্তীকালে পরিত্যক্ত অবস্থায় কিছু অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এসএমপি পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, লুট হওয়া ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হলেও বাকি ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে লুন্ঠিত ৫ হাজার ৭৪০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ৫৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ১৮টি অস্ত্রের সাথে ৫ হাজার ১৯৯ রাউন্ড গুলির কোনো হদিস এখন পর্যন্ত নেই।

সিলেটের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা আশঙ্কা করছেন, দেশের যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার হতে পারে। এমতাবস্থায় জনগনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। লুন্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার ১৯৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করতে দ্রুত প্রসাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। অস্ত্র উদ্ধার এবং দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘৫ আগস্টের পর পুলিশের মানসিকতায় স্থবিরতা পড়েছে। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি জনগণের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। যারা এই অস্ত্রগুলো লুট করেছে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ থাকতে পারে। তারা এই অস্ত্রদিয়ে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড সংঘঠিত করতে পারে। লুন্ঠিত এই অস্ত্রগুলো অপরাধীদের হাতে গেলে ডাকাতি, ছিনতাই, খুন কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতার মতো দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যদি কোনো অস্থিরতা দেখা দেয়, তাহলে এ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাস বা সহিংস কর্মকান্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যাবে।’

সূত্র থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট বেলা ২টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবরে সারাদেশে বিজয় উল্লাস শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও ছাত্র-জনতার সাথে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষজন বিজয় মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামেন। গোটা সিলেট মহানগরীজুড়ে হয় আনন্দ উচ্ছ্বাস। এই আনন্দ উচ্ছ্বাসকে পুজি করে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের ৬টি থানা ও বিভিন্ন ফাঁড়িতে। চলে ভাঙচুর আর লুটপাটের উৎসব। পুলিশের ফাঁকা স্থাপনাগুলো থেকে সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা লুটে নেয় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গুলি। দুর্বৃত্তরা এই সময় প্রসাশনের বিভিন্ন স্থাপনায় রক্ষিত মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপথ ও আলামত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আগুন দেওয়া হয় পুলিশের বিভিন্ন গাড়িতেও। পরবর্তীকালে থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশ কাজে ফিরলেও লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধারে হিমশিম খেতে হয় প্রসাশনকে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় খানেকটা উদ্ধার হলেও এখনো হদিস মিলেনি বিপুল পরিমাণ গুলি ও অস্ত্রের।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, সিলেটে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলিগুলো উদ্ধার না করা হলে জনসাধারনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে পড়বে। দেশের যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হতে পারে যেটা সকলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু অস্থিতিশীল অবস্থা নয় অপরাধীদের হাতে পড়লে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং খুনসহ যেকোনো অপরাধ সংঘঠিত হতে পারে এই অস্ত্র দিয়ে। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সহিংসতায়ও ব্যবহৃত হতে পারে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে এবং লুন্ঠিত অস্ত্র ও গুলিগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্ট সিলেট মহানগর পুলিশের ৬টি থানা ও বিভিন্ন ফাঁড়িতে পুলিশের স্থাপনা থেকে ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি, কার্তুজ এবং টিয়ারশেল সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৭৪০ রাউন্ড লুট করা হয়। এর মধ্যে দীর্ঘ ৯ মাসে লুন্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির মধ্যে ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি, কার্তুজ এবং টিয়ারশেলের মধ্যে ৫ হাজার ১৯৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের বাইরে রয়ে গেছে। লুট হওয়া এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রাইফেল, শটগান ও পিস্তল। যদি লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলির কোথাও কোনো সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেখানেই থাকুক অভিযান পরিচালনা করে তা উদ্ধার করা হবে। সিলেটের অস্ত্র লুটের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। লুন্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা ও গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন