
স্টাফ রিপোর্টার:
সীমান্তে হঠাৎ করে শুরু হয়েছে বাংলাদেশীদের পুশইন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে পুশইন শুরু করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত ২৪ দিনে সারাদেশে হাজারেরও বেশি মানুষকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এরমধ্যে কেবল সিলেট বিভাগে ৪৯০ জনকে পাঠানো হয়েছে।
পুশইন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অন্তত চার দফা কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দিল্লী এখনো এসব বিষয় নিয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। বরং উল্টো গতকাল বুধবার (২৯ মে) সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে ৮২ জনকে পুশইন করা হয়েছে। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে পুশইন করে বিএসএফ।
গত ৭ই মে থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ দিনে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার সীমান্ত দিয়ে ৪শ ৯০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এরমধ্যে সিলেটে ১২৪, মৌলভীবাজারে ৩৩১, হবিগঞ্জে ১৯ এবং সুনামগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সারাদেশের সীমান্তে গত ৭ই মে থেকে এখন পর্যন্ত ৯৭৫ জনকে পুশইন করা হয়েছে। সিলেটের ৪ জেলা ছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত দিয়ে ১১১, কুড়িগ্রামে ৮৪,দিনাজপুরে ২, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৭, ঠাকুরগাঁও ১৯, পঞ্চগড়ে ৩২, লালমনিরহাটে ৭৫, চুয়াডাঙ্গায় ১৯, ঝিনাইদহে ৪২, কুমিল্লায় ১৩, ফেনীতে ৩৯, সাতক্ষীরায় ২৩ এবং মেহেরপুরে ৩০ জনকে পাঠানো হয়। এ ছাড়া সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ৭৮ জনকে পুশইন করা হয়েছে।
বিজিবি জানিয়েছে, যাদের পুশইন করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে ভারতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল। তাদের মধ্যে অনেকে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলও খেটেছে। কিন্তু বিএসফ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুরসরণ না করেই পুশইন করছে। এ ছাড়া পুশইন করা অনেকেই ভারতের নাগরিক বলেও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
সীমান্তে পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন বলতে বোঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঠেলে দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি ভারতে নেই, তবে দীর্ঘদিন ধরেই এটি চলে আসছে। যদিও সরকারিভাবে কেউই এই পদ্ধতিকে স্বীকার করে না, তথাপি তা বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে। অনেকের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরিপন্থি। দেশটি বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির নতুন কৌশল হিসেবে ‘পুশইন’ শুরু করেছে। এ ছাড়া এটি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারত থেকে এভাবে পুশ-ব্যাক করা সম্পূর্ণই আইনবহির্ভূত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পুশইন ইস্যুতে পর্যায়ক্রমে ৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে এই চার দফায় ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এসব চিঠিতে পুশইনের ঘটনাকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ এবং দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরির হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার