
এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন:
২০২৪ সালে দেশের অগনিত মানুষের প্রাণের বিনিময়ে গণ অভ্যুথানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসনামলের কবর রচিত হয়। দল মত, জাতি-ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মতিতে মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনায় জনাব মোহাম্মদ ইউনুছকে অন্তরবর্তীকালীন সরকার প্রধান নির্বাচিত করা হয়। দায়িত্ব গ্রহনের পর ঘোষনা দিয়েছিলেন, সর্বকালের সেরা নির্বাচন জাতিকে উপহার দিবেন। আশান্বিত হয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। ক্ষমতা গ্রহনের পর বিতর্কিত বক্তব্য দিতে শুরু করলেন। সর্বজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি ডঃ মোহাম্মদ ইউনুছ সকলের শ্রদ্ধা ও ভালবাসাকে উপেক্ষা করে বললেন, কতিপয় ছাত্রদের অনুরোধে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরকালীন সময়ে, বিশেষ সভায় বাইডেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিলেন, গণঅভ্যুথানের মাষ্টার মাইন্ড হলেন জনাব মাহফুজ আলম। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের শাসনামলে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় ইমরান এইচ সরকারের ডাকে মাননীয় কোর্টের রায়কে উপেক্ষা করে শাহবাগে অবস্থান নিলেন কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধ অপরাধীকে ফাসি দিতে হবে। তৎকালীন সরকার, এই পাতানো আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে তাহাদের পক্ষে আইনপ্রণয়ন করে ফাসি কার্যকর করা হয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে অন্তরর্তীকালীন সরকারের পৃষ্টপোষকতায় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে শাহবাগে অবস্থান নিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্তরবর্তীকালীন সরকার জরুরী সভা ডেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। অন্তরবর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার এর মধ্যে পার্থক্য কি ? আবাবিলদের নতুন সংগঠন “এনসিপি” একক ভাবে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এর কর্মসূচি দিলেন। ডঃ ইউনুছ ও তাহার শুভাকাংখীরা কি দেখেননি ? নিশ্চই দেখেছেন। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এ কথাটি হয়ত তিনি ভুলে গেছেন। প্রতিষ্টিত রাজনৈতিক দল সমূহকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করলেন। ডঃ ইউনুছ ২০০৬ সালে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সেই ব্যর্থতা হয়ত ২০২৪ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাস্তবায়নের রুপরেখা প্রণয়ন করিতেছেন মনে হচ্ছে। নতুবা জাপানে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে এক সভায় বলেছেন ১টি দল ব্যাতিত অন্য কোন দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাচ্ছে না। একটি দল বলতে কি বুঝিয়েছেন তা যদিও নাম উল্লেখ করেননি। সাধারন জনগনের বুঝতে বাকী নেই। সেই দলের নাম হয়ত সাহস করে বলেননি। কারন সেই দলটি রাষ্ট্র ক্ষমতায় স্বাধীনতার পর একাধিকবার ক্ষমতাসীন ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচন সমুহে গড়ে শতকরা ৩৬ ভাগ ভোটের অধিকারী ছিল সেই দলটি। বর্তমান পেক্ষাপটে হয়ত শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ভোট পাবে। সেই দলের পক্ষ থেকে ভোটের রোড ম্যাপ চাওয়া তো কোন অপরাধ নহে। কেন রোড ম্যাপ দিতে অনিহা ? আর সেই অস্পষ্টতা থেকেই তো সন্দেহের সৃষ্টি। ১/১১ এর সরকার তো ২ বছর রোড ম্যাপ দিয়ে ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুথানের পর প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি বা অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান মরহুম মোঃ সাহাব উদ্দিন মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন, তা কিন্তু জাতির নিকট চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। তাহার উদ্দেশ্য ছিল সৎ। সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া। যেমনঃ এনালগ আমলে পৃথিবী কি একটি জায়গায় স্থির ছিল ? না, স্থির ছিল না। চলমান প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন হয়ে বিশ্বে প্রযুক্তির সুবাধে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে এবং হবে। তাই বলে বাপ দাদার ইতিহাসকে তো আর ভুলা যাবে না। যে জাতি সম্মান দিতে যানে সেই জাতি সম্মান নিতেও পারে। যে জাতি স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচনে ৯৮.৯৯ ভাগ ভোট পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন, সেই জাতি ১৯৭৫ সালের হত্যাকান্ড পরবর্তীতে একজন লোকও রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেননি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তাহাদের ভোটের হিস্যা শতকরা ৩৮ ভাগ। সেই ৩৮ ভাগ ভোটের মধ্যে হয়ত পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ২ ভাগ। অবশিষ্ট ৩৬ ভাগ ভোটারতো আর পালিয়ে যাননি। ভোটাধিকার যেহেতু রয়েছে সেহেতু ভোট প্রদানের অধিকার ও রয়েছে। তাহাদের দল নিষিদ্ধ হয়েছে কিন্তু ভোট প্রদানের অধিকার তো নিষিদ্ধ হয়নি। সুতরাং বিএনপি ৩৬+ আওয়ামীলীগ ৩৬ মোট =৭২ ভাগ। এইসব ভোটার “এনসিপি” বা অন্য যে কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়েন না কেন, পরিসংখ্যান বলে, বাম ডান মিলে মোট =২৮ ভাগ ভোটার হয়ত তাহাদের পক্ষে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপ্রাসঙ্গিঁক হয়েছেন, সেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হয় বর্তমান সরকার। সুতরাং সাধু সাবধান ! আইন বা নীতি বাক্য বা ভাল ভাল কথা বলতে পারি বা জানি কিন্তু মানি না। যেমনঃ ১৯৯০ সালে ৩ জোটের রুপরেখায় অত্যন্ত চমৎকার কথা লিপিবদ্ধ ছিল কিন্তু এই রুপরেখা কি বাস্তবায়ন হয়েছে ? না, একটি ব্যাতিত অন্য কোন কল্প কাহিনী বাস্তবায়ন হয়নি। সেই একটি হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসনের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত শাসন ব্যবস্থা। যে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা ভংগুর, সেই দেশে নীতিবাক্য শুনিয়ে লাভ নেই। পশ্চিমা বিশ্বে প্রাতিষ্টানিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিদ্যামান থাকায় কোন রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করতে হয়নি। বাংলাদেশে এক বা ২ ব্যক্তির ডাকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বা অযতা সময় নষ্ট করে বা প্রাণহানির আশংকা থাকা স্বত্বেও নেতার ডাকে রোদ বৃষ্টি উপক্ষো করে মিটিং মিছিলে অংশগ্রহন করার কথা নহে। যদি তাহারা শিক্ষিত হত তাহলে জীবনের জুকি নিয়ে কোন অবস্থাতে ও সারাদেশ থেকে অগণিত মেহনতি মানুষেরা নেতার বক্তব্য শুনতে শত শত মাইল অতিক্রম করে সভা সমাবেশে যোগ দিত না। কারন যে জাতি শিক্ষিত, সে জাতি তাহার অধিকার সম্পর্কে সচেতন সুতরাং ২০২৪ সালের নিষ্পাপ বাচ্ছারা অকাথরে প্রাণ দিয়ে সমাজের অপ্রয়োজনীয় মানুষদের ভোগ বিলাসের ক্ষেত্র তৈরী করে দিত না। তাহাদের রক্তের ভেজা দাগ এখন ও শুকায়নি। জাতি বিশ্বাস করে ছিল ডঃ ইউনুছ সাহেবকে। কিন্তু তাহার বর্তমান কার্যক্রম থেকে মনে হচ্ছে, সামনে কি দেশ আবার সংজ্ঞাতময় পরিবেশ তৈরী হতে যাচ্ছে ? আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করে সঠিক পথ বেছেঁ নেওয়ার তৌফিক দান করুন। “আমীন”।
লেখক, সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট।মোবা: ০১৮১৯-১৭৬২১৭।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার