
স্টাফ রিপোর্টার:
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যু ড. ইউনূস একা একা সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না বলে দাবি করেছেন নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টকশো অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল কবীর বলেন, রাখাইন ইস্যু এখন বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন বিশ্বের বড় বড় শক্তির একটি প্রক্সি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এখানে আমেরিকার স্বার্থ আছে, চীনের স্বার্থ আছে, ভারতের স্বার্থ আছে, মিয়ানমারের নিজেদের স্বার্থ আছে; স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে। আমি অধ্যাপক ড. ইউনূস, খলিলুর রহমান বা আদিলুর রহমানের দেশপ্রেমকে ন্যূনতম প্রশ্ন না করে বলতে চাই, তারা এটা বুঝতে ভুল করেছেন যে তারা সমস্ত সততা এবং দেশপ্রেম দিয়ে হলেও এই সমস্যা একা একা সমাধান করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, এখানে সবার অংশীদারিত্ব রয়েছে। আপনি বিদেশিদের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলবেন বা এটা মাথায় রেখে বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলবেন; আপনার ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন না? সিকিউরিটি বলতে শুধু ফিজিক্যাল সিকিউরিটি বোঝায় না, কিন্তু সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ তো। কাল যদি সেখানে একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়ে তাহলে আর্মিকেই তো যেতে হবে।
তাহলে তার যে নেতৃত্ব; দুই, তিন, চারজন জেনারেলের সঙ্গে কনফিডেন্স আলাপটা তো করতে হবে। কিংবা এখানে যাদের বিশেষজ্ঞতা রয়েছে, রিজিওনাল পলিটিক্স নিয়ে যারা কাজ করেন, ভূরাজনীতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সাথে আপনার কথা বলতে হবে না? রাজনৈতিক দলগুলো যারা ক্ষমতায় গেলে এটা বাস্তবে ডিল করতে হবে তাদের সঙ্গে আপনার কনফিডেন্স এর মধ্যে নিতে হবে না?
নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, এই আলাপ-আলোচনাগুলো ছাড়া কিছু জিনিস তারা গোপনে করে ফেলতে চায়, বাংলাদেশের জনগণের কোনোরকম চাপ ছাড়া। আবার চাপের মধ্যে যেগুলো আছে সেগুলো তারা করতে রাজি না। বাংলাদেশের মানুষের দিক থেকে, রাজনৈতিক দল থেকে চাপ আছে একটি গণতান্ত্রয়ন প্রক্রিয়ার।
এটা তারা করতে রাজি না। আবার এখানে একটা জিও পলিটিকাল অস্থির একটা কেন্দ্রের মধ্যে ওনারা কতগুলো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, সেগুলো আমাদেরকেও মানতে হবে, সেনাবাহিনীকে মানতে হবে, রাজনৈতিক দলকে মানতে হবে; তাদের এই ধারণা কোথা থেকে আসলো?
তিনি বলেন, পলিটিকাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব সোসাইটি হিস্ট্রি এবং ডিপ্লোম্যাসি, রিজনাল স্টাবিলিটি এগুলো সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এবং রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পথ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে এগুলো করা যায়। কিন্তু দুই-তিনজন লোকের জন্য সারা দেশ বিপদে পড়বে এটা আমরা মানব কেন? সমাজের যারা চিন্তাশীল মানুষ তাদের ভাবনার সঙ্গে সরকারের ভাবনার একটি সংঘাত তৈরি হচ্ছে। ফলে এই যে অস্থির অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে, এই অস্থিরতা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষগুলোকে যদি না বোঝে তাহলে এই সরকার যাদের মানুষ ভালোবেসে প্রতিষ্ঠিত করেছিল তারা অসম্মানিত হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বলতে বিশেষত ড. ইউনূস। বাকিদের তো তিনি এখান থেকে ওখান থেকে নিয়েছেন, যারা সমাজের একটি নির্দিষ্ট সোসাইটির লোক। যাদের মধ্যে ডাইভার্সিটি নাই। পেশার ক্ষেত্রে ডাইভার্সিটি হলেও ক্লাসের ক্ষেত্রে কোনো ডাইভার্সিটি নাই। যেমন এনজিওদের একাংশ। এদের কাজ হলো বিরাজনীতিকরণের একটি উপাদান যুক্ত করা। তারা মনে করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার চাইতে এনজিওর প্রক্রিয়ার মধ্যে সমাজ এবং দেশের মঙ্গল হতে পারে। তাদের এই ভাবনা ১০০ পার্সেন্ট ভুল।
নূরুল কবীর বলেন, সরকারে যাদের নেওয়া হয়েছে তারা অধিকাংশই জনবিচ্ছিন্ন। তারা রাজনীতি কীভাবে কাজ করে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি কীভাবে কাজ করে জানে না। ফলে তারা যে তাদের পদ্ধতিতে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে না, এর বিপদটা হচ্ছে তারা অসম্মানিত হবেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যে অসম্মানিত হচ্ছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার