
স্পোটর্স রিপোর্টার :
টান টান উত্তেজনা মাঠে। তবে তখনো বাংলাদেশ ২-০ গোলে এগিয়ে। আরও এক গোলের সুযোগ। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বর্ণা থ্রু পাস দেন সাগরিকার উদ্দেশ্যে, তিনি বল নিয়ে দ্রুতগতির সঙ্গে আক্রমণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে প্রতিপক্ষের বক্সে প্রবেশের পূর্বেই তাকে পেছন থেকে ট্যাকেল করেন নেপালি ডিফেন্ডার সিমরান রয়। ঘটনার ভিডিও রিপ্লেতে দেখা যায় সাগরিকার বুকে ধাক্কা দিয়ে, পেছন থেকে চুল টেনে ধরেন সিমরান তাতেই দুই জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা, মুহূর্তেই প্রতিক্রিয়ায় সাগরিকাও জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে।
দুই ফুটলারকে ছাড়াতে পরে সতীর্থরা আসেন। এ ঘটনায় ভুটানি ম্যাচ রেফারি ইয়াংখে শেরিং সাগরিকা ও সিমরানকে লাল কার্ড দেখান। দলের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়া ১০ জনের লাল-সবুজের দাপট খানিকটা কমে যায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০ জনের নেপাল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ১০ মিনিটের ব্যবধানে ফেরে সমতায় তারা।
তবে তখনো যেন নাটকীয়তার মূল পর্ব বাকি ছিল। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে ডান প্রান্ত থেকে উমেলা মারমার বাড়ানো বলে শ্রীমতি তৃষ্ণা রানী ডি-বক্সের ভেতরে নেপালি দুই ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। ৩-২ ব্যবধানে হারায় নেপালকে।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় গতকাল একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন কোচ পিটার বাটলার। উমেলা মারমা ও রুপা আক্তারের জায়গায় খেলেন বর্ণা খাতুন ও শাস্তি মারডি। দলে পরিবর্তন এলেও আক্রমণে কোনো ঘাটতি ছিল না বাংলাদেশের। শুরু থেকেই নেপালকে চাপে রেখে আধিপত্য দেখায় স্বপ্না-সাগরিকারা। তবে ১১তম মিনিটে জয়নব বিবির ব্যাক পাসে গোলরক্ষক স্বর্ণা রানীর ভুলে বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ, যদিও অল্পের জন্য রক্ষা পায়। পরের মিনিটেই বাঁ-প্রান্ত দিয়ে সাগরিকার দুর্দান্ত মুভ থেকে মুনকি শট নেন, ফিরতি বলে প্লেসিং করে গোল করেন শিখা (১-০)। প্রথম ম্যাচেও গোল করেছিলেন তিনি।
গোল হজমের পর নেপাল মরিয়া হয়ে ওঠে সমতায় ফিরতে। ২৮ মিনিটে পূজার হলুদ কার্ড পাওয়ার পর ফ্রি-কিক থেকে সুশিলার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। এরপর ৩৭ মিনিটে ফের জালের দেখা পায় বাংলাদেশ। শিখার শটে গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও ফিরতি বলে সাগরিকার প্রেসিংয়ে ব্যবধান বাড়ে (২-০)। বিরতির আগে নেপালের মীনা দিউবা একক প্রচেষ্টায় গোলের সুযোগ পেলেও কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন স্বর্ণা।
তবে ম্যাচের দ্বিতীয় হাফে ছিল পুরোটাই নেপালের আধিপত্য। আর ১০ জনের বাংলাদেশের বিপক্ষে নেপালের ১০ জন যেন আরও ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিল। একের পর এক আক্রমণে অসহায় করে তুলে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে। এর মধ্যে ৭৬ মিনিটে পেয়ে যায় পেনাল্টি। স্পট কিক থেকে লাল-সবুজের জালে বল জড়ান ডিফেন্ডার আনিশা রয়। ১০ মিনিটের ব্যবধানে কাউন্টার অ্যাটাকে নেপালকে সমতায় ফেরান মীনা দেবুবা। তারপর একের পর এক আক্রমণ করে বাংলাদেশের বুকে ভয় ধরালেও বল আর জালে জড়াতে পারেনি। তবে শেষ বাঁশিবাজার আগে চমক দেখায় স্বাগতিকরা। তাতে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন লাল-সবুজের মেয়েরা।
শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করা তৃষ্ণা রানী ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আসলে সবাই খুশি, তবে তার থেকে বেশি আমি খুশি। শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জেতাতে পেরেছি। প্রথম হাফে আমরা দুইটা গোল করেছিলাম তবে দ্বিতীয় হাফে আবার দুই গোল হজম করেছি। আবার আমাদের স্ট্রাইকার লাল কার্ড দেখেছেন, ঐ হিসেবে আমরা মানসিকভাবে খানিকটা চাপে ছিলাম। তারপর শেষ মুহূর্তে আমি যখন গোলটা করি… অনেক ভালো লেগেছে। দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি ভালো লাগছে।’ আগামীকাল পরবর্তী ম্যাচে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ মাঠে নামবে ভুটানের বিপক্ষে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার