Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আ.লীগ কার্যালয় এখন আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেপথ্যে কী?

admin

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আ.লীগ কার্যালয় এখন আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেপথ্যে কী?

স্টাফ রিপোর্টার:
৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পরই পাল্টে যায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের চিত্র। রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত ১০তলা ভবনের কার্যালয়টিতে দেওয়া হয় আগুন, করা হয় ভাঙচুর ও লুটপাট। এক সময় পদচারণায় মুখরিত অফিসটিতে তৈরি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ।

তবে সম্প্রতি হুট করেই সংস্কার করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টিতে। জোরেশারে চলছে ধোয়ামোছার কাজ। ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ লেখা ব্যানারে করা হচ্ছে এ কাজ।

আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট নিয়ে শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা। কে বা কারা এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিংবা কী তাদের পরিচয়, তার কিছুই জানা যাচ্ছে না। তবে, বলা হচ্ছে- এখানে সারা দেশ থেকে আসা জুলাই যোদ্ধারা বিশ্রাম নেবেন।

উৎসুক জনতা মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অথবা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তত্ত্বাবধানে কাজটি হতে পারে। কিন্তু কাছে তারা এ ব্যাপারে কোনো দায় নিয়ে কথা বলতে চাননি। পুলিশও কিছুই জানে না। এ অবস্থায় কেউ কেউ ধারণা করছেন, নেপথ্যে কোনো প্রভাবশালী মহল থাকতে পারে। যাদের উদ্দেশ্য হতে পারে, এখানে দোকানপাট বসিয়ে ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।

এর আগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয়’ নামে ব্যানার টাঙিয়ে ভবনটি দখলের চেষ্টা করা হয়। এমন একটি ব্যানার দীর্ঘদিন সেখানে টাঙানো ছিল।

গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গুলিস্তানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আওয়ামী লীগের ১০তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক কার্যালয়টিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর বেশ কয়েকদিন ধরে চলে লুটপাট। যে যেভাবে পেরেছে ভবনের জানালা, দরজা, গ্লাসসহ সবকিছু খুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।

শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রবেশমুখে ঝুলছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামের একটি ব্যানার। ভবনের ভেতরে চলছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। একদল শ্রমিক ভবনের নোংরা পানি, ময়লার স্তূপ, ইটের গুঁড়া, ভাঙা টাইলসসহ জমে থাকা সব ধরনের ময়লা পরিস্কারের কাজে ব্যস্ত। সিঁড়ি ও ওপরের রুমগুলো থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে টাইলস। প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জনৈক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা ফ্যাসিস্ট আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমরা চাই না এখান থেকে আবার ফ্যাসিজমের জন্ম হোক। এখানে ফ্যাসিস্টরা নিজেদের কর্মকাণ্ড করুক। এজন্য এখানে আমরা নিজেদের কার্যক্রম শুরু করব। এজন্যই পরিষ্কার করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ কাজে কারো থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই। এমনকি তিনি কোনো দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কাজ করছেন সে বিষয়েও কিছুই বলতে চাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘আমরা আমাদের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। কে বা কারা পতিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এভাবে দখলের চেষ্টা করছে তা বলতে পারব না। আমাদের দলও এ বিষয়ে অবগত নয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি। তবে কারা এ কাজটা করছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করব। এরপর আমাদের পক্ষ থেকে মন্তব্য করব।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি (উপপুলিশ কমিশনার) মো. শাহরিয়ার বলেন, বিভিন্ন সময়ে দলটির কার্যালয়ে বিভিন্ন ব্যানার টাঙানো হয়েছে। সম্প্রতি দেখলাম, কারা যেন ব্যানার লাগিয়ে কার্যালয়টি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করছে। এটা নিয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো নির্দেশনা নেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক বছরে এখানে মানুষজন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এমন অবস্থা হয়েছে যে, উৎকট গন্ধে আশপাশের দোকানদারদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তা-ই না, ভবনটি এখন ছিন্নমূল মানুষজনসহ রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও পথচারীদের শৌচাগারে পরিণত হয়েছে। ভাসমান মানুষের নেশা-আড্ডাও জমত এখানে। এখন পরিস্কার করা হচ্ছে এতে খারাপ কিছু দেখছি না। তবে কারা পরিস্কার করছেন-সে বিষয়টিও পরিস্কার করা দরকার। তা না হলে সাধারণ মানুষের মাঝে নানান প্রশ্ন ও উৎকণ্ঠা তৈরি হবে।

মামুনুর রশিদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভবনটি কারা পরিস্কার করছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ব্যানার থাকলেও ব্যানারের পক্ষে এখন পর্যন্ত কেউ নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। কেউ কেউ বলছেন, ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল অথবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এটা পরিস্কার করছেন। আবার অনেকে বলছেন, ভবনটি যাতে এভাবে নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্য আওয়ামী লীগ নেতারা লোক ভাড়া করে কৌশলে নিজেদের পার্টি অফিস পরিস্কার করছে। তবে কোনটা সঠিক-তা বলা সত্যিই কঠিন।

জানা যায়, ১৯৮১ সাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ঠিকানাটি দলীয় কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করে আসছে আওয়ামী লীগ। আট কাঠার এই জমিটি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয় দলটি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুরোনো ভবন ভেঙে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা নতুন এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়।

এর আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে অন্তত আটবার।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশের পর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাসায় বসে দল পরিচালনার নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো। ১৯৫৩ সালে কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করত আওয়ামী লীগ। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার সিমসন রোডের ঠিকানায় যায় আওয়ামী লীগের অফিস। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান নবাবপুর রোডে দলীয় অফিস নেন। এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে বসা শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। ১৯৮১ সালের দিকে শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয় গুলিস্তান ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, যা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসাবে পরিচিত।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন